অনেকের কাছেই কৌতহলের একটি বিষয় হল মানুষ কাঁদে কেন??? বন্ধুরা,আজকে আমরা এই বিষয়টিকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে একটু ব্যাখ্যা করে দেখব এবং একটি সন্তুষ্টজনক উত্তর আপনাদেরকে দেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রথমে আসা যাক মানুষ কাঁদে কেন?
একটা বিশাল জটিল প্রশ্ন।মানুষ কাঁদে কেন এই প্রশ্নটির সঠিক উত্তর পাবার জন্য আমাদেরকে জানতে হবে কান্নার ধরন সম্পর্কে।
কান্না সাধারণত তিন প্রকারঃ
কান্নার ধরনের ওপর নির্ভর করে কান্নার কারণ গুলো জানা যাবে।
তাহলে বন্ধুরা প্রথমে আমরা জেনে নিই কান্না সেই প্রকারভেদ গুলো কি কি………
১। বেসাল কান্না
২। রিফ্লেক্স কান্না
৩। আবেগের কান্না
প্রথমেই আসি বেসাল কান্নাতে…
এই ধরনের কান্না সব সময় হয় না। সব সময় আমাদের চোখের ভিতর ভেজা থাকে। এটা এমন এক ধরনের পিচ্ছিল তরল যা আমাদের চোখ কে সব সময় ভেজা রাখে এর কারণে আমাদের চোখ কখনো একেবারে শুকিয়ে যায় না। এক গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের চোখ প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ আউন্স কান্না তৈরি করে।
এরপরে আসা যাক রিফ্লেক্স কান্না……
আমরা যখন কাঁদি তখন আমাদের চোখ দিয়ে গরগর করে পানি চলে আসে এটা কেন হয়। এটা অবশ্যই রিফ্লেক্স কান্না। এর কাজ হল আকস্মিক কোন আঘাত, চুলকানি, যন্ত্রণা সংবেদনশিল কোন বস্তু থেকে আঘাত পেলে হয়ে থাকে।
আবেগের কান্না………
এই কান্না শুরু হয় সেরেব্রাম থেকে। সেরেব্রাম হলো মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ। এজন্য সেরেব্রাম কে বলা হয় গুরু মস্তিষ্ক। সেরেব্রাম এ থাকে আমাদের সব ধারণা কল্পনা চিন্তাভাবনা মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত করার ক্ষমতা। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস আমাদের চোখের পাতায় জল হয়ে চোখের ভিতর থাকে, যখনই আমরা কান্না করি তখনই জল কান্না হয়ে চোখ দিয়ে পড়তে শুরু করে।
কান্নার প্রকারভেদ থেকে আমরা সহজে জানতে পারলাম কেন আমরা কান্না করে থাকি।
বন্ধুরা এখন আমরা জানবো এই কান্না করা কি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি খারাপ………
বন্ধুরা এই নিয়ে গবেষণার যেন শেষ নেই। দুঃখ-কষ্ট বা আনন্দে মানুষ কেঁদে ফেলে, এই কান্নায় কি কেবলই মনের আবেগ প্রকাশ ঘটে, এই নিয়ে গবেষণা করতে করতে গবেষকেরা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটি হলো……
কান্না মানুষের জন্য ভালো। কিন্তু কতটা ভালো তা তারা এখনো বের করতে পারেনি। যদি মন ভেঙ্গে যায় তবে চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে এবং আমাদের উচিত সেটা করতে দেওয়া। সব সময় আবার হাউমাউ করে কাঁদা তা ও ঠিক নয়।
………… কিছু বছর ধরে কান্নার উপর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যতসব নিবন্ধন রয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে ৯৪ শতাংশ ক্ষেত্রেই কান্নাকে গুণ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কান্না না হওয়ার সঙ্গে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, সূত্র আছে সম্প্রীতি এক ব্লগে দেখা গেছে।
পুরুষদেরও চোখের পানি ফেলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ছেলেরা কাঁদে না আর কষ্ট ভিতর চেপে রাখে যার কারনে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা স্ট্রোক এবং হার্ট ফেল করে বেশি।
এখন বন্ধুরা রাগ দুঃখ আনন্দ যে কোন আবেগ থেকে যে কান্না আসে তা মানুষের মধ্যে মনুষত্ব তুলে ধরে। তবে কান্নার বিষয়টি সম্প্রতি বিভিন্ন রোগে দেখা যায়। যেমন
- ইন্দোনেশিয়ায় মানুষ এর মধ্যে কেউ কাঁদলে এটাকে অস্বাস্থ্যকর, মানসিক সমস্যা,অল্পবয়সি মৃত্যুর পূর্ব লক্ষণ হিসেবে ধরা হয় অর্থাৎ যে শুধু কষ্ট পাবে সেই শুধু কান্না করবে বাকিরা এক্ষেত্রে কান্না করতে পারবে না।
- তবে নেদারল্যান্ডসের গবেষক দলটি দেশের পাঁচ হাজার ব্যক্তিকে নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছেন এবং সেখানে দেখা গেছে এক বছরে নারীরা গড়ে ৩০ থেকে ৬৪ বার পর্যন্ত কান্না করে যেখানে পুরুষ মাত্র ১৭ বার কাঁদে। পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন কান্না থামিয়ে রাখে। নারীরা উচ্চমাত্রায় থাকা একটি হরমোনের কারণে বেশি কান্না করে থাকে। নারীরা শুরু লেট্রিন হরমোনের উচ্চ মাত্রা থাকার কারণে বেশি কান্না করে থাকে।
- গর্ভধারণের সময় এই হরমোন বেশি থাকে বলে নারীরা এ সময় বেশি কান্নাকাটি করে। প্রাপ্তবয়স্কদের কান্নার ক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ মনে করে কান্নার ফলে তাদের বিচলিত অবস্থা কিছুটা কমে আসে।
- এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে ১৫০ জন নারীকে ছবিতে মেয়ের ও মায়ের কান্নার দৃশ্য দেখানো হয়। এই দৃশ্য দেখে ৩৩ জন কেঁদে ফেলেন। যারা এই দৃশ্য দেখে কেঁদে ফেলেন তারা দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের বিচলিত কষ্টকর পরিস্থিতি অনুভব করেছিল।
- বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় মানুষ যখন অসহায় বোধ করে তখন বেশি কাঁদে। কেউ যদি অবস্থার উন্নতি ঘটে তখন সেটি স্বস্তির কারণ হয় এছাড়াও আরও বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় কান্না যদি মানুষ করে থাকে কিন্তু সেটা যদি অতিরিক্ত না হয় সেটা মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর।
এখন আমরা দেখব……
অবস্থান বুঝে আবেগ প্রকাশ করা হলো কান্নার একটি ধর্ম। এখন আমরা বলব অতিরিক্ত যদি কান্না করি সেটা আমাদের শরীরের যেকোন সমস্যার কারণ হয় কিনা………
- বন্ধুরা বিভিন্ন বিশ্লেষক এবং গবেষক দল এটা প্রমাণ করেছে যে অতিরিক্ত কান্না করা স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে অথবা শিশুদের ক্ষেত্রে উভয়ের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক। শিশুদের ক্ষেত্রে যেমন অতিরিক্ত কান্না শারীরিক ও মানসিক ব্যাঘাত ঘটায়, তা স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত কান্না শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ব্যাঘাত ঘটায। কান্নার কারণ বুঝতে ব্যর্থ হলে কিংবা কান্না কে অবহেলা করলে সেটা মানুষের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। একইভাবে উপস্থিত বুদ্ধি আমাদের হ্রাস পায়। বদরাগ জেগে উঠে। এছাড়াও আমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বিভিন্নভাবে হেরফের হয়।
এজন্য আমাদের উচিত অবস্থা অনুযায়ী আমাদের আবেগ প্রকাশ করা। সেটা হতে পারে কান্নার মধ্য দিয়ে, অথবা হাসির মধ্য দিয়ে। যেভাবে হোক না কেন তা হতে হবে পরিমিত পরিমাণে। পরিমিত পরিমাণে হলে সেটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর। আর সেটা যদি অপরিমিত পরিমাণে হয় সেটা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। ধন্যবাদ।