ব্লাড ক্যান্সার কি? ও কি লক্ষন গুলো দেখলে বুঝবেন আপনি ক্যান্সারে আক্রান্ত?

বন্ধুরা আজ আমরা কথা বলবো ব্লাড ক্যান্সার নিয়ে। প্রথমে আমাদের জানতে হবে ব্লাড ক্যান্সার কাকে বলে ????ব্লাড ক্যান্সার এই কথাটা শুনলে অনেকেই আঁতকে উঠে, আবার অনেকেই এর  সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে।

আঁতকে ওঠার কারণ রয়েছে,

  • কারো যদি ব্লাড ক্যান্সার ফাইনালে স্টেজে গিয়ে ধরা পড়ে তখন তার চিকিৎসা পদ্ধতি চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। তাই স্বভাবতই এই নামটা শুনলে আঁতকে ওঠার বিশেষ একটা কারণ।
  • ব্লাড ক্যান্সার নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে, অনেকে মনে করে এটি সংক্রামক রোগ। আবার অনেকে মনে করে ব্লাড ক্যান্সার ছোট-বড় দের মধ্যে শুধু বড়দের হয়, ছোটদের হয়না।

এখন এই বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত। বন্ধুরা ব্লাড ক্যান্সার ছোট-বড় সবার ই হতে পারে এবং ব্লাড ক্যান্সার সংক্রামিত ছোঁয়াচে রোগ নয়।

ব্লাড ক্যান্সার কি???

রক্তে যে রক্ত কণিকা গুলো থাকে সে রক্তকণিকা গুলো যখন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় তখন তাকে ব্লাড ক্যান্সার বলা হয়ে থাকে।  

ক্যান্সারের প্রকারভেদঃ

এখন আমরা জানবো ব্লাড ক্যান্সারের প্রকারভেদঃ

কারণ ব্লাড ক্যান্সার কাকে বলে এর সঠিক সংজ্ঞা নির্ভর করবে ব্লাড ক্যান্সারের প্রকারভেদ এর উপর। তাহলে বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক ব্লাড ক্যান্সার কে কয় ভাগে ভাগ করা যায়।

ব্লাড ক্যান্সার কে প্রথমত তিন ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

  • শ্বেত রক্তকণিকা থেকে সৃষ্টির উপর ভিত্তি করে
  • লসিকা গ্রন্থি সৃষ্টি  বৃদ্ধি করে
  • প্লাজমা সেল উৎপন্ন এর উপর ভিত্তি করে।

প্রথমে আলোচনা করব শ্বেত রক্তকণিকা থেকে সৃষ্ট ব্লাড ক্যান্সার কি????

বন্ধুরা শ্বেত রক্তকণিকা থেকে সৃষ্ট ক্যান্সারকে লিউকেমিয়া ব্লাড ক্যান্সার বলে। এই ধরনের ব্লাড ক্যান্সার তিন ধরনের হতে পারে।

  • একিউট লিউকেমিয়া,
  • একিউট লিম্ফব্লাস্টিক লিউকেমিয়া,
  • ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া।

লসিকা গ্রন্থি থেকে সৃষ্ট  ব্লাড ক্যান্সারঃ

লসিকা গ্রন্থি থেকে সৃষ্ট এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার কে লিম্ফোমা ব্লাড ক্যান্সার বলে। এই ধরনের ব্লাড ক্যান্সার দুই রকমের হয়ে থাকে।

  • স্কিন লিম্ফোমা
  • লিমফোমাপ্লাস্টিক লিম্ফোমা

এখন আসা যাক প্লাজমা সেল ব্লাড ক্যান্সার

নিউ কেনিয়া প্লাজমা সেল থেকে সৃষ্ট ব্লাড ক্যান্সার ব্লাড ক্যান্সারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারণ হলো কেমিক্যাল এর পরে ভাইরাস অথবা পরিবেশগত রেডিয়েশনের কারণেও ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে। কিন্তু যে কারণটি আমরা বারবার বলি সেটি হল জেনেটিক কারণ।

কেন আমাদের ব্লাড ক্যান্সার হয়ে থাকে????

ব্লাড ক্যান্সার আমাদের হয়ে থাকে নানা ধরনের

  • তেজস্ক্রিয় প্রভাব,
  • রাসায়নিক বর্জ্য,
  • ধূমপান,
  • কৃত্রিম রং,
  • কীটনাশক,
  • ভাইরাস ইত্যাদি এর জন্য দায়ী। তার সাথে সাথে জেনেটিক কারণও রয়েছে। এগুলোর প্রভাবে শরীরে মিউটেশন ঘটে যায় ও কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিক উল্টাপাল্টা সংকেত প্রবাহিত হয়। তখন কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। অপরিণত ও অস্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ চলে আসে।

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষন

ব্লাড ক্যান্সার সংক্রামক রোগ নয় এবং এটি যে কারো হতে পারে। স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ১১ টি লক্ষণ ব্লাড ক্যান্সারের জন্য প্রকাশ করেছে। এই সকল উপসর্গ বা লক্ষণগুলো দিলে ঘাবড়ে না গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের নেওয়া উচিত।

  • দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি। আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তি বোধ করেন অথবা অবসাদে ভোগেন, তবে সেটা অনেক রোগের কারণ হতে পারে। সেটা হতে পারে ক্যানসার অথবা অন্য কোনো রোগের কারণ। মলাশয়ের ক্যান্সার ক্যান্সার হলে সাধারণত এই ধরনের উপসর্গগুলো দেখা যায়। তাই আপনি যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ক্লান্ত বোধ করেন, অথবা দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্ত থাকেন, অবিলম্বে চিকিৎসা সেবা নেওয়া দরকার।
  • আকস্মিক ওজন-হ্রাস। কোন কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই দ্রুতগতিতে যদি ওজন কমতে শুরু করে, তবে সেটা অবশ্যই ভাবনার বিষয়। ক্যান্সার সাধারণত ওজন কমিয়ে ফেলে। তাই শরীরের দিকে খেয়াল রাখতে হবে সব সময়। বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবে ওজন কমতে পারে। ডায়াবেটিস হলে ওজন কমে যায়। যে কারণেই হোক না কেন যদি আমাদের শরীরে এই ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
  • দীর্ঘদিনের ব্যথা। দৃশ্যত কোন কারণ ছাড়া যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোন স্থানে ব্যথা অনুভব করেন, তবে ওষুধ খাওয়াতে ও যদি কাজ না হয়, এই নিয়ে অবশ্যই ভাবনা চিন্তার কারণ রয়েছে।  শরীরের কোন জায়গায় ব্যথা করছে তার ওপর নির্ভর করছে, রোগী ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত নাকি, ডিম্বাশয়, নাকি পায়ুপথে ক্যান্সার এ আক্রান্ত। এই ধরনের ব্যথা যদি দীর্ঘদিন আপনারা অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • অ স্বাভাবিক মাংসপিণ্ড। আপনি যদি শরীরের কোন অংশে অস্বাভাবিক কোনো মাংসপিণ্ড দেখতে পান অথবা মাংস দেখেন কিংবা এই ধরনের পরিবর্তন বুঝতে পারেন, তবে এটা তেমন কিছু লক্ষণ যা আপনার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। এমনকি আপনার শরীরে কোনো পরিবর্তন স্বাভাবিক বলে মনে না করলে তখনও আপনার উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার, কারণ এই ধরনের অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ।
  • ঘন ঘন জ্বর হওয়া। ঘন ঘন জ্বর হওয়া ক্যান্সার শরীরে জেঁকে বসলে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এতে ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয়। ভাবনার বিষয় হল ব্লাড ক্যান্সার এর শেষ পর্যায়ের উপসর্গ ঘন ঘন জ্বর। তবে অন্য ধরনের কিছু ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে ঘন ঘন জ্বর শরীরে দেখা দিতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ যদি দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • ত্বকের পরিবর্তন। অনেকেরই ত্বকের ক্যান্সারের ব্যাপারে সচেতন নন। ত্বকে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ক্যান্সার শনাক্ত করার সহজ উপায়। তাই ত্বকের অতিরিক্ত তিল অথবা আঁচিলের মতো হলে তাহলে অবশ্যই আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এই ধরনের ফুসকুড়ি বা লালচে হয়ে যাওয়া লক্ষন গুলো ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষন।
  • দীর্ঘস্থায়ী কাশি। দীর্ঘস্থায়ী কাশি আমাদের ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। তবে এই কাশি যখন হবে তখন পিঠে ব্যাথা করবে এবং এই ধরনের কাশি যদি আপনারা বুঝতে পারেন বা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
  • এছাড়া অকারণে রক্তক্ষরণ যদি হয়ে থাকে মলদ্বার দিয়ে তাহলে সেটাও আমাদের ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ। সেটা হতে পারে মলদ্বার দিয়ে অথবা কাশির মাধ্যমে।
  • এছাড়া স্ত্রীদের যৌনাঙ্গের মধ্যেও মাঝে মাঝে এই ধরনের রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে।
  • এছাড়াও আরও অনেক ধরনের লক্ষণ আমরা ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখে থাকি। যেমন………
  • মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে যাবে। যেমন ডায়রিয়া,  কোষ্ঠকাঠিন্য,  ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। মূত্র ত্যাগের সময় অথবা মলত্যাগের সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে। এছাড়াও খাবার গ্রহণে সমস্যা, বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিবে, তলপেটে ব্যথা করবে,  বদহজম হবে,  এ ধরনের সমস্যা গুলো ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আমরা ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখতে পাব।

বন্ধুরা উপরের যেই উপসর্গের কথা আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম এই উপসর্গগুলো যদি আপনারা আপনাদের মধ্যে লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাদের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এই লক্ষণগুলো ব্লাড ক্যান্সার এর  লক্ষণ।  ধন্যবাদ।