গর্ভাবস্থায় মায়ের ছোটখাটো অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় গর্ভবতী মা সেগুলো কাউকে বলেন না আবার কখনো কখনো পরিবারের সদস্যরা তাতে গুরুত্ব দেন না। অথচ এসব সমস্যার সমাধান সময় মত দিতে না পারলে গর্ভবতীর নারীরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে।
তাই গর্ভবতী মায়ের যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে অর্থাৎ স্বাস্থ্য সমস্যায় তাকে চিকিৎসকের কাছে অথবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।
গর্ভবতী মায়ের কিছু স্বাস্থ্য সমস্যাঃ
গর্ভবতী নারীর কিছু সমস্যার কথা এখানে বলব……… সাথে সাথে তার প্রতিকার ও দেওয়ার চেষ্টা করব।
বমি বমি ভাব
- প্রথমে আসা যাক সবচেয়ে কমন যেই লক্ষণটি সেটা হলো বমি বমি ভাব বা খাবারে অরুচি। বমি সাধারণত সকালের দিকেই বেশি হয়। তিন মাসের পর থেকে আস্তে আস্তে বমি কমে যায়। এই উপসর্গ সাধারণত মায়ের শরীরে খুব বেশি ক্ষতি করে না। তবে খাওয়া-দাওয়া কমে যাওয়ার জন্য শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
প্রতিকার
এখন বমি বমি ভাব এর প্রতিকার এর জন্য যা প্রয়োজন……
- গর্ভবতী মাকে আশ্বস্ত করতে হবে।
- ঘুম থেকে উঠে শুকনা খাবার খেতে হবে। যেমন-মুড়ি, বিস্কিট।
- খাবারের অন্তত ১ থেকে ২ ঘন্টা পর পানি খেতে হবে।
- প্রতি বারে বারে অল্প করে খেতে হবে।
- তাড়াতাড়ি করে দুধ বা পানি পান করা যাবে না ধীরে-সুস্থে পান করতে হবে।
- যেকোনো প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
রক্তস্বল্পতা
এরপর যে সমস্যাটি দেখা যায় সেটি হলো অনেক সময় গর্ভবস্থায় রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
সে ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের করনীয়……………
প্রতিকার
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথম মাস থেকে ফলিক এসিড এবং তিন মাসের পর থেকে পরিমাণমতো আয়রন ও ক্যালসিয়াম খেতে হবে।
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন কচু শাক, কলার মোচা, তেতুল, তরমুজ, কলিজা, ডিম ইত্যাদি খেতে হবে।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন আমলকি, লেবু, কাঁচামরিচ, পেয়ারা, আনারস এবং কাঁচা ফলমূল খেতে হবে।
- প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
গলা ও বুক জ্বালা
গলা ও বুক জ্বালা গর্ভাবস্থায় মায়েদের একটি সাধারণ সমস্যা। দুশ্চিন্তা, পরিশ্রম এবং যথেষ্ট পরিমাণে পানি না খাওয়ার জন্য এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।
প্রতিকার
- খাওয়ার পর পরই শোয়া চলবে না। শোয়ার প্রয়োজন বেশি হলে মাথার নিচে দুটি বালিশ দিয়ে অর্ধ স্বয়ং অবস্থায় শুতে হবে।
- মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা এবং অতিরিক্ত তেল দিয়ে খাবার খাওয়া যাবেনা।
- প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা পানি পান করা যাবে না। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- সহজল্ভ্য খাবার বারে বারে অল্প অল্প করে খেতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য
কোষ্ঠকাঠিন্য গর্ভবস্থায় একটি বড় ধরনের সমস্যা। গর্ভবস্থায় অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে, অনুপযুক্ত খাবার গ্রহণ, প্রয়োজনমতো পানি পান না করা ও অনিয়মিত পরিশ্রমের ফলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
প্রতিকার
- কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিলে আমাদের উচিত প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
- প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও টাটকা ফল খেতে হবে যেমন কলা, গাছ পাকা পেয়ারা, খেজুর, আপেল ইত্যাদি। এছাড়াও আটার রুটি ও দুধ খাওয়া যেতে পারে।
- নিয়মিত ঘরের কাজও হাঁটাচলা করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইসুবগুলের ভুষি খেতে পারেন।
অনিদ্রা
যে সমস্যাটি গর্ভকালীন সময় হয়ে থাকে সেটি হল অনিদ্রা। গর্ভবস্থায় শেষের দুই তিন মাস অনিদ্রা হয়। অনেকের আবার ঘুম কমে যায়।
প্রতিকার
এর প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন………
- বিকেলে হাটা।
- শোবার আগে গরম দুধ খাওয়া বা বই পড়া ইত্যাদি উপকার হতে পারে।
- ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
হাতে পায়ে ব্যথা করাঃ
গর্ভধারণকালে আরেকটি যেটি হয়ে থাকে সেটি হল হাতে পায়ে ধরা। বিশেষ করে রাতে অনেক সময় হাতে পায়ে ধরে আসে।
প্রতিকার
- হালকা ম্যাসাজ বা গরম সেঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়।
- এ অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
পেটে ব্যাথা
অন্য যে সমস্যাটি গর্ভধারণকালের সময় হয়ে থাকে সেটি হল পেটে ব্যাথা। গর্বের প্রথম অবস্থাতে এটি অনেক সময় দেখা দেয় যা শেষের দিকে খুব বেড়ে যেতে পারে।
প্রতিকার
- পেটে ব্যাথা দূর করতে শক্ত বিছানায় ঘুমাবে। শক্ত বিছানায় ঘুমালে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
- শিরদাঁড়ায় মাসাজ করতে পারেন।
- হাঁটা-চলার সময় কোমরের বেল্ট ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
- সামনে ঝুঁকে কোন কাজ করা যাবে না।
- ভারী জিনিস উঠানো যাবে না।
- ব্যথার ওষুধ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
পায়ের শিরা ফুলে যাওয়া
এছাড়া এ অবস্থায় যে সমস্যাটি আরো বেশি হয়ে যায় সেটি হল পায়ের শিরা ফুলে যাওয়া। অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের পায়ের শিরা ফুলে যেতে পারে।
প্রতিকার
- দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়ানো যাবেনা।
- পা তুলে বসতে হবে। প্রয়োজনে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাধতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শরীর ফুলে যাওয়া
বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস পা ফুলে গেছে কিনা দেখার জন্য উভয় গোড়ালির চারপাশে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে যে পয়েন্টে চাপ দেওয়া হয় সেখানে যদি একটি ছোট গর্ত হয়ে যায় এবং শিগ্রই তা মিলিয়ে যায়, তবে বুঝতে হবে আপনার শরীর ফুলেছে। শরীরে লবণ বৃদ্ধি পেলে পায়ের গোড়ালি ফুলে যায়।
প্রতিকার
- পানি জমে শরীরে পানি জমলে বা শরীর ফুলে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগী রক্তচাপ, প্রস্রাব পরীক্ষা করা ভালো।
- ওজন দেখা উচিত।
- বাড়িতে বিশ্রাম নিব।
- খাবারের সাথে বাড়তি লবণ খাব না।
- প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিব।
মূত্রনালীর সংক্রমন
এছাড়া গর্ভধারণের সময় আরো অনেক সমস্যা হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হলো মূত্রনালীর সংক্রামন। গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
প্রতিকার
- প্রচুর পরিমাণে তরল পানি পান করতে হবে।
- প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
বন্ধুরা উপরে যে সমস্যা গুলোর কথা বললাম এই সমস্যাগুলো কমবেশি সব নারীর গর্ভ অবস্থায় হয়ে থাকে। এবং সাথে সাথে আমরা প্রতিকারও বললাম। যাতে করে আমার গর্ভবতী বোনেরা উপকৃত হয় এবং সচেতন হয়।