ওজন বনাম ডায়াবেটিকস

সুপ্রিয় বন্ধুরা,

আশা করি সবাই ভাল আছেন। আপনাদের কাছে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি। যেটা বর্তমান সময়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আজকে যে বিষয়টা আপনাদের সাথে শেয়ার করব, সেটা হচ্ছে বর্তমান সময়ে যে রোগ টা সারা বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।

খুবই মনোযোগ দিয়ে গুরুত্ব দিয়ে এই বিষয়টা আপনারা লক্ষ্য করবেন, যে বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় ৭০% ।এবং প্রতি ৭০ জনের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ হলে ৪০ জন মহিলা।

আবার যদি আপনি শহর এবং গ্রামের কথা চিন্তা করেন, তাহলে গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষ অনেক বেশি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত।

এখন আসি কেন গ্রামের  তুলনায় শহরের মানুষের ডায়াবেটিস বেশি হয়।

তার আগে আমাদেরকে জানতে হবে ডায়াবেটিস রোগ টা কি????

ডায়াবেটিস রোগ টা হচ্ছে আমরা অনেকেই এটাকে বহুমূত্র রোগ বলে থাকি। আবার অন্যদিকে ডায়াবেটিসকে সকল রোগের মা বলা হয়।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন ডায়াবেটিস আমাদের জন্য কতটা ভয়ানক। একটা মানুষ যদি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তার শরীরে অন্য রোগ  আসার  সম্ভাবনা বেশি।

স্বাভাবিকভাবেই আমরা শুনে থাকি চিনি বেশি খেলে নাকি ডায়াবেটিস রোগ হয়। এটা আসলে একটা ভুয়া কথা।এটা টিক যে ডায়াবেটিকস বেডে গেলে চিনি খাও্যা উচিত না।

কেন ডায়াবেটিকস বেড়ে যায়ঃ

আপনাকে জানতে হবে কেন আপনার শরীরে ডায়াবেটিস বাড়ে।

আপনি জানলে  অবাক হয়ে যাবেন আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের শরীরে কিন্তু  ডায়াবেটিসের একটা নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। এই মাত্রাটা যদি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায় তখন আমরা বলি ডায়াবেটিস বেড়ে গেছে।আর যদি ডায়াবেটিকস এর মাত্রা কমে জায় তখন আমরা বলি ডায়াবেটিকস কমে গেছে।

স্বাভাবিক মানুষের শরীরে ডায়াবেটিকস এর স্বাভাবিক মাত্রা (৫-৭)।ডায়াবেটিকস   কমে যাওয়া এবং বেড়ে যাওয়া দুইটাই আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই আমাদেরকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য।

স্বাভাবিকভাবে ডায়াবেটিক শরীরে বেড়ে যাওয়া এবং কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো আমাদের শরীরে অগ্নাশয় নামক একটা অর্গান আছে যেখান থেকে আমাদের শরীরে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়। যখন আপনার শরীরের স্বাভাবিক ভাবে ইনসুলিন উৎপন্ন হবে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

 কিন্তু  যখন এই অগ্নাশয় পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন করে না তখন আমাদের শরীরে গ্লকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কমে গিয়ে ডায়াবেটিস টা বাড়িয়ে দেয়।

এখন তাহলে আসি কেন আমাদের শরীরের মধ্যে ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যায়……………।

প্রধানত ইনসুলিন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ অগ্নাশয় বা প্যানক্রিয়াস সঠিকভাবে কাজ করতে না পারা।এর অন্যতম কারণ হচ্ছে শরীরের রক্ত দূষিত হয়ে যাওয়া।

তাই আমাদেরকে প্রথমে লক্ষ্য করতে হবে কী কারণে আমাদের শরীরের রক্ত দূষিত হয়ে যাচ্ছে।যার কারণে প্যানক্রিয়াস সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না বা  ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারছে না।

রক্ত দুষিত হওয়ার কারনঃ

এখন তাহলে আসি কেন আমাদের শরীরের রক্ত দূষিত হচ্ছে রক্ত দূষিত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ওজন।যার কারনে আপনার শরীরের ওজন বেড়ে যাবে সাথে সাথে আপনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চর্বির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে আপনাকে অসম্ভব রকমের ফ্যাটি করে তুলবে। স্বাভাবিকের আপনাকে অনেক বেশি মোটা লাগবে।  এবং এই চর্বি আপনার রক্তের সাথে মিশে গিয়ে রক্ত দূষিত করে ফেলবে।

আপনার শরীরের অগ্নাশয় ইনসুলিন তৈরি করা বন্ধ করে দিবে যখন সে বিশুদ্ধ রক্ত পাবে না। তাহলে যেহেতু চর্বি  আপনার রক্তের সাথে মিশে গিয়েছে তার অর্থ হলো আপনার রক্ত দূষিত হয়ে গেছে। এই দূষিত রক্ত আপনার শরীরে থাকলে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করবে না।

ফলে আপনার শরীরে গ্লকোজের মাত্রা বেড়ে গিয়ে আপনার শরীরে অসম্ভব রকমের ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে সেটা হতে পারে ১১,১৬,২২ পয়েন্ট  এর চেয়ে বেশিও হতে পারে।

তাহলে আমাদেরকে বুঝতে হবে আমাদের ডায়াবেটিকস টা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের ওজন।

ওজন নিয়ন্ত্রন এর উপায়ঃ

ওজন টা যদি আমরা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি তাহলে আমাদের ডায়াবেটিকস ও  নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারব ।

যতই আপনি ডায়াবেটিসের জন্য বাহির থেকে ইনসুলিন এবং ওষুধ খান না কেন আপনার ডায়াবেটিস ততক্ষন নিয়ন্ত্রণে থাকবে যতক্ষণ আপনি ওষুধ খেতে  থাকবেন।

কিন্তু ওষুধের যে একটা পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে সেটা আমরা সবাই জানি।

তাই ওজন কমানো আমাদের জন্য খুব দরকার।

প্রতিদিন সকালবেলা উঠে পড়ে আপনাকে দুই ঘন্টা হাঁটতে হবে।

হাঁটার পরে আপনার ঘাম বের হতে হবে।

গরম পানি খাবেন। গরম পানি শরীরের চর্বি কমাতে খুব তাড়াতাড়ি ভূমিকা রাখে।

গরম পানির সাথে আপনি একটু লেবুর রস দিতে পারেন কারণ গরম পানি এবং লেবু যখন একসাথে আপনার শরীরে যাবে আপনার শরীরের চর্বি কমাতে সহায়তা করবে।

সকালের নাস্তাঃ

নাস্তা একেবারে হালকা ভাবে নিবেন। তার মধ্যে আপনি রুটি নিতে পারেন রুটির সাথে আপনি সবজি জাতীয় কিছু খেতে পারেন কিন্তু ভুলেও ডাল জাতীয় কিছু খাবেন না কারণ ডালের মধ্যে প্রচণ্ড শর্করা থাকে সেটা আপনার শরীর বাড়াতে সহায়তা করবে ।এরপর  রং চা বা গ্রিন টি যে কোন একটা পান করতে পারেন।

এর পরে আপনি 2 ঘণ্টা পরে হালকা কিছু স্নাক্স খেতে পারেন।

দুপুরের খাবারঃ

দুপুরের খাবারে অল্প পরিমাণে ভাত খাবেন। কারণ ভাতে  প্রচুর শর্করা আছে। খাবারের সাথে সবজি খাবেন যেটা আপনার শরীরের জন্য এনার্জি দিবে। কিন্তু ফ্যাট বাড়াবে না।

বিকেলে হালকা একটা স্ন্যাক্স নেন।সেটা হতে পারে আপেল  বা এ  জাতীয় কিছু।

আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আপনার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আপনি  হাঁটাচলা করতেছেন কিনা,

আপনার শরীর থেকে ঘাম বের হচ্ছে না।

আপনি যতটুকু পারেন পরিশ্রম করবেন শরীর থেকে ঘাম বের হওয়ার মতো করে।

যেমন আপনারা বাড়িতে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করলে আপনার শরীর থেকে ঘাম বের হবে।

রাতের খাবারঃ

রাতে কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।

এভাবে যখন আপনি আপনার ওজন স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে পারবেন। তখন আপনার শরীরের চর্বি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।

যখন শরীর থেকে চর্বি  বের হয়ে যাবে প্রস্রাবের সাথে বা ঘামের সাথে তখন আপনার রক্তনালীতে চর্বির পরিমাণ কমে যাবে রক্ত চলাচলে বাধা পাবেনা। রক্ত সঠিকভাবে চলাচল করতে পারবে।  যখন রক্ত ধীরে ধীরে পরিষ্কার হবে আপনার শরীরে রক্ত বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। আপনার অগ্নাশয় আবারো বিশুদ্ধ রক্ত পাবে এবং সে পুনরায় ইনসুলিন তৈরি করবে। যে ইনসুলিন সঠিকভাবে তৈরি হয়ার কারণে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসা মানেই আপনার শরীরে যত ধরনের  সমস্যা আছে সব সমস্যা থেকে আপনি ধীরে ধীরে পরিত্রান পাবেন। সুতরাং আমাদের এই কথাগুলো অনুসরণ করে আপনি যদি সঠিক নিয়মে কিছুদিন কষ্ট করতে পারেন  বা পরিশ্রম করতে পারেন তাহলে সারা জীবন আপনি ফিট থাকতে পারবেন এ বিশ্বাস আমরা রাখি।

ধন্যবাদ