বন্ধুরা বর্তমানে পাল্লা দিয়ে যেন সিজারের সংখ্যা বেড়ে চলছে। কিন্তু এটা যেন গাণিতিক হারে নয় বরং জ্যামিতিক হারে।
আর ক্লিনিকগুলোর কথা তো আমরা বাদই দিলাম যদিও এখনও পর্যন্ত সরকারি হসপিটাল গুলোতে সিজারের সংখ্যা অনেক কম তারপরেও বেসরকারি যেখানে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার সম্ভাবনায় সবাই ছুটে যায় সেখানে যেন সিজারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।
এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আমরা ডাক্তারদের ব্যবসায়িক মানসিকতা কে দোষ দিলে ভুল হবে। সাথে সাথে আমাদের রোগীদের আত্মীয়-স্বজনরাও কিন্তু এর জন্য মারাত্মক ভাবে দায়ী।
সবাই চিন্তা করে একটা সুস্থ বাচ্চা যাতে জন্ম দিতে পারে। সাথে সাথে মায়েরা যাতে লেবার পেইন থেকে বেঁচে একটা সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে পারে এই মানসিকতা অনেক মেয়েকে বা মাকে সিজারের দিকে ঝুকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বুঝতে পারতেছেনা এই সিজার যেমন শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের ক্ষতি করবে সাথে সাথে মায়েদেরকে জীবনের মত যেন পঙ্গু করে দিচ্ছে।
নরমালে বেবি হওয়ার পূর্বশর্ত
নরমালে বেবি হতে চাইলে একজন মাকে যে সকল বিষয়গুলো পূর্বশর্ত হিসেবে মেনে চলতে হবে তার মধ্যে……………
১। শক্ত মনোবলঃ
প্রথমে একজন মাকে প্রাকৃতিক নিয়মে ডেলিভারি করানোর মতো শক্ত মনোবল রাখতে হবে অর্থাৎ ডেলিভারি হওয়ার সময় যে পরিমাণ লেবার পেইন হয় সে পরিমাণ মানসিক জোর নিজের মধ্যে তৈরি করে রাখতে হবে।
২। নিয়মিত ব্যায়ামঃ
এর পর যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, বা হাঁটাহাঁটি করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম এর মধ্যে লিওজেল(lugel) নামক এক ধরনের ব্যায়াম রয়েছে যাতে পেলভিক এলাকায় মাংস পেশী সংকোচন ও অপসারণ করার মাধ্যমে কটিদেশের প্রসারণ ক্ষমতা বাড়ানো হয় ।
এতে করে আমাদের নরমালে ডেলিভারি করার সময় অনেক সহজেই মায়েরা সন্তান প্রসব করতে পারে।
৩। গভীরভাবে শ্বাস প্রশ্বাস ছাড়াঃ
গভীরভাবে শ্বাস প্রশ্বাস ছারলে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে। তাহলে লেবার পেইনের সময় লেবারে চাপ দিতে বললে শ্বাস বন্ধ করে চাপ দেওয়া যায়।
৪। নিয়মিত সাঁতার কাটাঃ
নিয়মিত সাঁতার কাটলে একজন মা নিজেকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে পারে সাথে সাথে শারীরিকভাবেও।
আমাদের দেশে অনেক মহিলারা আছে যারা নিজেদের ঘর প্রসূতিকালীন সময়ের ঘটনা রোমাঞ্চিত ভাবে বলতে বেশি ভালোবাসে আর এর মধ্য দিয়ে নিজেকে সাহসী, এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করে কিন্তু আমাদের যে সকল বন্ধুরা বর্তমানে গর্ভধারণ কালীন অবস্থায় রয়েছে তাদের উচিত এই ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনা বর্ণনা অভিজ্ঞতা বাদ দেওয়া।
কারণ আমাদের দেশের মেয়েদের একটি রোগ আছে যতটুকু নয় ততটুকু বাড়িয়ে বলার জন্য আমাদের বন্ধুদের কাছে আমাদের পরামর্শ হলো এই ধরনের ঘটনাগুলো শোনা বাদ দিয়ে দিন এবং নিজেকে নরমাল ডেলিভারি করার মতো মানসিক অবস্থায় থাকুন।
৫। সুষম খাবার গ্রহণঃ
এরপর আমাদের যে কাজটি করতে হবে সেটি হল সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যদি আমরা খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের বেবি অতিরিক্ত বড় হয়ে যাবে না।
আবার খুব বেশি দুর্বল হয়ে ও যাবে না। এতে করে আমাদের বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার মতো উপযোগী হবে।
নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে কতগুলা পর্যায়ের দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে অর্থাৎ নরমাল ডেলিভারির তিনটি পর্যায় রয়েছে।
তিনটি পর্যায় যদি প্রসূতি মায়ের থাকে তাহলে খুব সহজে বাচ্চা নরমালে প্রসব করা যাবে।
- বাচ্চা প্রসবের সময় জরায়ুর মুখ ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত খোলাকে প্রথম পর্যায় বলে।
- জরায়ুর মুখ ১০ সেন্টিমিটার খোলা থেকে শুরু করে বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত সময়কে দ্বিতীয় পর্যায় বলে।
- গর্ভফুলকে ডেলিভারির তৃতীয় পর্যায় বলে।
বাচ্চা প্রসবের প্রথম পর্যায়ে চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার পর্যন্ত জরায়ুর মুখ খুলে এবং ওই সময় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হয় এই ব্যাথা কমানোর জন্য ডাক্তাররা রোগীদের অবশ করে দেওয়ার জন্য ইনজেকশন দিয়ে থাকে।
বন্ধুরা কোন প্রসূতি মা যদি এই তিনটি ধাপের প্রতিটি ধাপে ধাপে পার করতে পারে তাহলে একটা সুস্থ সবল এবং স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চা ডেলিভারি হতে পারে।
তাহলে বন্ধুরা উপরে যে সকল পূর্ব সতর্কতামূলক বিষয়ে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম এই সকল বিষয়ে যদি আপনারা অনুসরণ করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনারা নরমালে বাচ্চা প্রসব করতে পারবেন কোন ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই।