সন্তান না হওয়ার পেছনে নারী ও পুরুষের ভূমিকা

সন্তান না হওয়ার পেছনে নারী ও পুরুষের ভূমিকা কতটুকু আজকে আমরা সেই বিষয়ে জানব।

যদি সন্তান প্রত্যাশী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে স্বামী ও স্ত্রী একই ছাদের নিচে থাকার পরেও গর্ভধারণ না করলে একটু অস্বাভাবিক দেখা যায়।

সাধারণত দেখা যায় প্রথম এক বছরের মধ্যে ৮০ শতাংশ দম্পতি সন্তান লাভ করে থাকে। বাকি ১০ ভাগ দেরীতে সন্তান লাভ করে। আর বাকি ১০ ভাগ কোনভাবে সন্তান লাভ করে না। যারা একেবারেই সন্তান লাভ করেনা তাদের আমাদের সমাজে বন্ধাত্ব বলে।

আমরা যদি বন্ধ্যত্বের কারণ খুঁজতে চায় তাহলে প্রথমে দেখতে হবে সন্তান কিভাবে জন্ম নেয়।  

মেয়েদের ক্ষত্রে

একজন মেয়ে শিশু ধীরে ধীরে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় বা মাসিকের সময় হয়। আমাদের দেশের মাসিকের সময় ১০ থেকে ১৪ বছর। তখন মেয়েদের ডিম্বাণুর পরিমাণ ৪০০০০ হয়। প্রতি মাসে বিপুল সংখ্যক ডিম্বাণু নষ্ট হয়ে যায় ।  প্রাপ্তবয়স্ক নারীর  শুধুমাত্র একটি ডিম্বাণু প্রতিমাসে পরিস্ফুটন হয়। এই মাসিকে সময়টা হচ্ছে ২৮  থেকে ৩০  দিন। ১৩ ও ১৪ তম দিনে ডিম ফুটে সেটা তখন ডিম্বনালীতে আসে যদি সে বিবাহিত হয় তাহলে স্বামীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর শুক্রাণু সঙ্গিনী শক্ত হয়। তখন জাইগোট তৈরি হয়।  সেটি পরে জরায়ুর ভিতরে ঢুকে জরায়ুতে আটকে দেয়।  ভ্রুন তৈরি হয় ও ধীরে ধীরে বড় হয়ে মানব শরীর গঠন করে। সেটি প্রসবের মাধ্যমে পৃথিবীতে আসে এভাবে জন্ম নেয় একটি মানব শিশু। এটি হচ্ছে সন্তান জন্ম দেওয়ার স্বাভাবিক একটি পদ্ধতি।

মেয়েরা যে কারনে কনসিভ করতে পারেনাঃ

  • অধিকাংশ মেয়ে বন্ধুদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে সমস্যাটি দেখা যায় সেটি হল থাইরয়েডের সমস্যা। অর্থাৎ থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে বা হরমোন বেড়ে গেলে ডিম্বাণু পরিস্ফুটন নাও হতে পারে। যার কারণে বাচ্ছা জন্ম দেওয়ার ক্ষ্মতা হারিয়ে যায়।
  • জরায়ুর দুই পাশে ডিম্বনালী আছে তার নীচে আছে মাসিকের রাস্তা বা যোনিপথ।  যদি কারো ডিম্বনালীতে সমস্যা থাকে বা বাধা থাকে সে ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক সন্তানধারণের সমস্যা দেখা যায়।  
  • ইনফেকশন থেকে ইনফেকশনের কারণে ডিম্বনালী যদি কেটে ফেলা হয় বা কারো যদি টিউমার লাইগেশন করে দেওয়া হয় সেই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী মিলন করলে ও ডিম্বাণু নিষিক্ত হবে না।
  • জরায়ুতে টিউমার  এর ফলে যদি কোন সমস্যা হয় তখন এই নারীর সন্তান ধারণে অক্ষম বলে বিবেচিত হবে।
  • জরায়ুর মুখে ইনফেকশন হয়ে যদি কোন সমস্যা হয়। জরায়ুর মুখ যদি সংকীর্ণ হয়। যদি বীর্য কোন কারনে জরায়ুর মধ্যে প্রবেশে বাধা পায় তাহলে সন্তান লাভ করতে পারে না।
  • এছাড়া যোনিপথের কথা বলা যায়, যোনিপথ যদি বাঁকা থাকে, যোনি  পথে যদি কোনো ধরনের পর্দা থাকে বা যোনিপথের মুখে যদি কিছু থাকে তাহলে স্বামী স্ত্রী সহবাস করতে পারবে না। যার কারণে স্পারম ঢুকতে পারে না এবং সন্তান ধারণ করতে পারে না।

এই এতক্ষণ ধরে আমরা যে সকল কারণগুলো বললাম সেগুলো হলো নারীদের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ নারীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা গুলো হলে একজন নারী কখনো সন্তান লাভ করতে পারে না।

এখন আসা যাক পুরুষদের মধ্যে কোন কোন সমস্যার কারণে পুরুষরা সন্তান ধারণে অক্ষম বলে বিবেচিত হয়

পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ

এখন আসা যাক পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ অর্থাৎ কেন কোনো পুরুষ সন্তান ধারণে অক্ষম হয়।

  •  শুক্রাণু উৎপাদন ও পরিবহন সমস্যায় মূলত পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ। বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পুরুষের বন্ধ্যাত্বের সঠিক কারণ জানা যায়।  
  • হতে পারে পুরুষদের মধ্যে সঠিক সংখ্যক শুক্রাণু উৎপত্তি না হওয়া বা উৎপন্ন না হওয়া।
  • শুক্রাণুবাহী নালী নিয়ে অথবা পুরুষাঙ্গের গঠনগত সমস্যার কারণে অর্থাৎ শুক্রাণু তৈরি হওয়ার পর থেকে গতিপথে কোনো প্রতিবন্ধকতা যদি থেকে থাকে তাহলে কোনো পুরুষ সন্তান লাভ করতে অক্ষম হয়।
  • পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ গুলো কে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়।
  • শুক্রাণু তৈরি বা উৎপাদন সমস্যা
  • জেনেটিক ডিএনএ গঠনের কারণে অনেক সময় একজন পুরুষ শুক্রাণু উৎপাদন ক্ষমতা হারাতে পারে বা জন্মগতভাবে তার ক্ষমতা না থাকতে পারে। যার কারণে কোনো পুরুষ সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়।
  • ছেলে শিশুর জন্মের পর পরই দেখা উচিত অন্ডকোষের ভিতরে দুটি টেস্টিস আছে কিনা। যদি না থাকে তবে শরীরের ভেতর থেকে বের করে আনার অপারেশন আমাদের দেশে সহজে করা যায়। পরবর্তী সময়ে সে সন্তানের জন্ম দিতে পারে।  
  • সবজি-ফল ও মাংসে থাকা কোলেস্টেরল শরীরে প্রবেশ করে পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া পেনিসে চলাচলের শিরা-ধমনীর সমস্যার কারণে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে।
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে ভেজাল ফরমালিন সীসা পারদ ইত্যাদি প্রবেশ করলেও শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রাণু পরিবহন সমস্যায় পুরুষের বিভিন্ন গ্রন্থির বৃদ্ধি হলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় তা শুক্রাণু পরিবহনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • সঠিক মাত্রায় পুরুষাঙ্গ উত্তেজিত না হওয়া বা বীর্যপাত না হওয়ার স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক মিলনে অক্ষমতা দীর্ঘদিন বিরতি দিয়ে সহবাস করলে ও এমন সমস্যা হতে পারে।
  • এছাড়া হরমোনের সমস্যা ও রয়েছে। হরমোনের তারতম্যের কারণে কোন কোন পুরুষের শুক্রাণু তৈরি হয় না। যার জন্য সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারায়।
  • নেশাজাতীয় দ্রব্য ধূমপান, মদ্যপান, নিষিদ্ধ ড্রাগ,পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ করে। পুরুষকে শারীরিকভাবে অক্ষম করে ফেলে যা পুরুষের বন্ধ্যাত্বের সমস্যার অন্যতম কারণ।
  • দৈনন্দিন জীবনযাপনের স্বভাব-চরিত্র পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। যেমন
  • টাইট জিন্স পরা,  
  • সবসময় আন্ডারওয়ার পরা,  
  • দীর্ঘক্ষণ মোটরসাইকেল চালানো,
  • গরম পানিতে গোসল করা,  
  • তলপেটের উপর বা খুলে নিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করা,  
  • দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামে বসে থাকা ইত্যাদি
  • গরম পরিবেশে কাজ করা ইত্যাদির মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদন এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এবং এতে করে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া আরো বিভিন্ন কারণে পুরুষের এ ধরনের সমস্যা হতে পারে যার কারনে কোন পুরুষ তার সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা পুরোপুরিভাবে হারিয়ে ফেলতে পারে।

এতক্ষন আমরা জানলাম কেন একজন পুরুষ বা মহিলা সন্তান জন্ম দিতে পারেনা। আশা করি এই টপিক টি সবার অনেক উপকারে আসবে।