ঘুম মস্তিষ্কের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ

জীবন এর তিনভাগ সময়ের মধ্যে এক ভাগ সময় তো আমরা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিই।

আমরা সবাই জানি ভালো ঘুম হলে আমাদের মন ভালো থাকে। আমরা দারুন উদ্যোমে মাথা খাটিয়ে একটা দিনকে কর্মময় করে তুলতে পারি।  কিন্তু আমরা কি জানি?????

যখন ঘুমে থাকি তখন আমাদের মগজ বা ব্রেইন কি কাজ করে?

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের মধ্যে যখন আমরা থাকি আমাদের অন্যান্য কার্যকলাপ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তখন সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে আমাদের ব্রেইনের নিউরনগুলো।

অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্কের নিউরনগুলো কোন অংশেই কম সক্রিয় থাকে না।

ঘুমের সময় মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কাজ আমরা আজকে তুলে ধরব কারণ মস্তিষ্ক ঘুমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ করতে পারে

  • সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তুতি

কারেন্ট বায়োলজি সাময়িকীতে একটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে,  গবেষণাটি হলো,

এই রকম ঘুমের সময় মস্তিষ্ক সারা দিনের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া নানা তথ্য উপাত্ত পারস্পরিক সম্পর্কের বিবেচনায় স্তরে স্তরে বিন্যস্ত করে সাজাতে থাকে এবং জাগ্রত অবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তত্ত্বগুলোকে তৈরি করে রাখে।

  • গবেষণায় আরও জানা যায় যে, মস্তিষ্ক ঘুমের মধ্যে নতুন নতুন অভিজ্ঞতাকে স্মৃতি হিসেবে সাজিয়ে রাখে। একই ধরনের সাম্প্রতিক পুরনো স্মৃতির সঙ্গে নতুন স্মৃতিকে পাশাপাশি বিন্যস্ত করে রাখে। কম্পিউটার যেমন  হার্ড ড্রাইভ এর বিভিন্ন ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের গান সিনেমার সাজিয়ে রাখে। যাতে আমরা সহজেই নির্দিষ্ট ফোল্ডার থেকে পছন্দের গান বা সিনেমা খুঁজে নিতে পারি।  মস্তিষ্ক এই স্মৃতির নামকরণ বা সংরক্ষণ ও সাজানোর এই কাজগুলো ঘুমের মধ্যেই করে থাকে।
  •  ঘুম কম হলে মস্তিষ্কের এ অংশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর কাজ করার বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এই কারণে লেখাপড়া বা কোন কিছু শেখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান খুবই জরুরী।
  • সৃজনশীলতা বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে ঘুম।  অচেতন অবস্থায় আমাদের মনে নানা বিষয়ের অসাধারণ সব যোগাযোগ ঘটে যেতে পারে যা চেতন অবস্থায় অনেক সময় ঘটেনা।  ২০০৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে ঘুম দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে রাখে এবং জাগ্রত অবস্থায় সৃজনশীলতার একটা অসাধারণ মুহূর্ত তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে। এ গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয় আপাতত দৃষ্টিতে দূরবর্তী দুটো বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে না পেলে ঘুম থেকে উঠার পর বিষয়টিকে সম্পর্কিত করতে পারার সম্ভাবনা প্রায় ৩৩ শতাংশ।
  • বিভিন্ন গবেষণায় আরো উঠে এসেছে যে ঘুম আমাদের মগজ পরিষ্কার করে। আমরা যেমন নিজের ঘরবাড়ি পরিষ্কারের কাজ করি ঠিক তেমন ঘুম মানুষের মস্তিষ্ক পরিষ্কার করে। এছাড়া আরো গবেষণায় দেখা গেছে ঘুমের সময় মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত বা মরে যাওয়া কোষগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক রাখে।
  • গবেষণায় আরও বলা হয় পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের ময়লা পরিষ্কার করতে না পারলে  ব্রেইন সংক্রান্ত নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যার কারণে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।  
  • কাজ শিখে মনে রাখা আমাদের মস্তিষ্ক একটা বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করে থাকে। ঘুম স্বল্পকালীন স্মৃতিকে দীর্ঘকালীন স্মৃতিতে পরিণত করতে পারে।
  • গাড়ি বা সাইকেল চালানো,  সাঁতার কাটা, খেলাধুলার চর্চা সহ নানা শারীরিক ক্রিয়াকৌশল আমাদের ঘুম আসার ক্ষেত্রে এই ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বন্ধুরা এই সব থেকে বোঝা গেল আমরা ঘুমিয়ে থাকলেও বা অবচেতন থাকলেও আমাদের মস্তিষ্ক কিন্তু অবচেতন থাকেনা। সবচেয়ে বেশি কাজ আমাদের মস্তিষ্ক করে থাকে আমাদের ঘুমে থাকা অবস্থায়।

তাই অতিরিক্ত রাত না জেগে আমাদের উচিত তারাতারি ঘুমাতে গিয়ে আমাদের ব্রেইন কে সুস্থ রাখা।