ব্রেইন স্ট্রোক কি???কেন হয়

মস্তিষ্ক বা ব্রেইন,

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অংশ এবং পুরো শরীরের চালিকাশক্তি।  মস্তিষ্কের কোষকলা সঠিকভাবে কাজ করার জন্য মস্তিষ্কে রক্তের মাধ্যমে অবিরাম অক্সিজেন এর সরবরাহ করা জরুরি। কোনো কারণে মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত প্রবাহ হ্রাস পেলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর মৃত্যুও ঘটতে পারে এবং শরীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক কাজ সম্পাদনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

ব্রেইন স্ট্রোক কি ???

মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের পরিমাণ আকস্মিকভাবে কমে বা বেড়ে গেলে মস্তিষ্কের যে  অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে, তাকে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ বা ব্রেইন স্ট্রোক বলা হয়।

দেহের রক্তের মাত্র ২% মস্তিষ্ক ব্যবহার করে। কিন্তু মস্তিষ্ক অত্যন্ত সংবেদনশীল। অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যা হলে দ্রুত এই কোষ গুলো নষ্ট হয়ে যায়। এগুলো শরীরের যে অংশ নিয়ন্ত্রণ করত, ওই অংশগুলো পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়।

স্ট্রোক হলো, ব্রেইনের রক্তনালীর রক্ত সঞ্চালনে বাধা বা অতিরিক্ত প্রেসারের কারনে রক্তনালী ফেটে যাওয়া। আমাদের ব্রেইনে অসংখ্য রক্তনালী রয়েছে। যদি কোন কারনে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত হলে এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।

স্ট্রোক দু’ধরনেরঃ

১।

হেমোরেজিক স্ট্রোক।  

হেমোরেজিক স্ট্রোক মানে হল রক্তনালীগুলো ছিড়ে যাওয়া।

 ২।

ইশকেমিক স্ট্রোক

ইসকেমিক স্ট্রোক রক্তনালীগুলোকে ব্লক করে ফেলে।

এ রক্তচলাচল দুটি কারণে ব্যাহত হতে পারে। প্রেসারের কারণে  রক্তনালীগুলো ছিড়ে গেলে একে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় হেমোরেজিক স্ট্রোক অর্থাৎ ব্রেইনের মধ্যে রক্ত নালী ছিড়ে গেলে।

অন্য কারণটি হলো হার্ট এ যে চেনেল বা রক্তনালী রয়েছে, সেখানে কোনো ব্লক থাকলে।

কারণ এ রক্তনালীগুলো জলের পাইপ এর মত । এখানে যদি কোন ব্লগ থাকে তাহলে ব্রেইনের কিছু অংশ নিউট্রিশন পাবেনা, অক্সিজেন ও পাবেনা,ফলে টিস্যুগুলো মরে যাবে একে বলা হয় ইশকেমিক স্ট্রোক।  এখন আমরা জানবো………।

কেন আমাদের স্ট্রোক হয়?????

যে সকল কারণে ব্রেইন স্ট্রোক হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম কিছু কারণ আজকে আমি এখানে শেয়ার করবঃ

  • যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে অর্থাৎ স্বাভাবিকের তুলনায় যখন বেশি কোলেস্ট্রেরল থাকবে তখন তাদের ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
  • মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হবার অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। বিশেষ করে অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড প্রেসার থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
  • ডিপ্রেশন  ও  মানসিক সমস্যা স্ট্রোকের আরেকটি প্রধান কারণ।  
  • এছাড়াও যারা দিনভর বসে বসে কাজ করে,  হাঁটাচলা সহ কায়িক পরিশ্রম করে না বললেই চলে তাদের ক্ষেত্রেও ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে।  
  • পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে ভাজা খাবার, ফাস্টফুড খাবার যারা খায় তাদের ক্ষেত্রেও স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে।
  • ধূমপানের ফলে অন্যান্য অনেক অসুখ এর সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
  • নিয়মিত অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েট বা এক্সারসাইজ করেন না। তাদের ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি রয়েছে।
  • তাছাড়া হার্টের অসুখ থাকলেও ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

এখন আমরা জানবো কিভাবে আমরা বুঝব আমাদের ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে অর্থাৎ ব্রেইন স্ট্রোকের কিছু লক্ষণঃ

ব্রেইন স্ট্রোকের কিছু লক্ষণঃ

  • মুখমন্ডলের একপাশ ঢলে পড়বে। এটি হলো স্ট্রোকের প্রধান ও প্রথম লক্ষণ।
  • রোগীর মুখমন্ডলের কোন একপাশ, বিশেষ করে মুখের বাম পাশের মাংসপেশি ঝুলে পড়ে যার ফলে রোগীর খাবার খাওয়ায় কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
  • স্ট্রোকের রোগীর তীব্র মাথাব্যথা হয়ে থাকে। তীব্র মাথাব্যথা অনেক কারণে হতে পারে। অনেকের মাইগ্রেন থেকে মাথাব্যথা হয়, কিন্তু যদি হঠাৎ করে কোন ধরনের কারণ ছাড়াই মাথার বাম পাশে ব্যাথা শুরু হয়, তবে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তার দেখা উচিত। কারণ এটি ব্রেইন স্ট্রোকের আরেকটি প্রধান লক্ষণ।
  • শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের ফলে শরীরের সাধারণ কাজ করার ক্ষমতা ব্যাহত হয়। ফলে হাত-পা কিংবা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর স্ট্রোকের রোগীরা নিয়ন্ত্রণ হারায়।
  • অনেক সময় আমরা হাতে দুর্বলতা অনুভব করে থাকি, কিন্তু পাত্তা দিই না কিন্তু এটা হতে পারে স্ট্রোকের লক্ষণ। স্ট্রোক করার আগে রোগী দুই হাতে অস্বাভাবিক দুর্বলতা অনুভব করেন। রোগীকে সাথে সাথে হাত মাথায় তুলে উপরের দিকে রাখতে হবে। যদি রোগী বলেন তিনি হাত তুলতে পারছেন না কিংবা যদি লক্ষ্য করেন হাত ছেড়ে দিচ্ছেন তবে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে কারণ এটি সম্পূর্ণভাবে ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ।

এমন লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন এই সকল লক্ষণ এর মধ্যে কোন লক্ষণ আপনারা দেখতে পান কোন ব্যক্তির মধ্যে তাহলে কোন অবস্থাতে আপনাদের বিলম্ব করা উচিত নয়। সরাসরি ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

কারা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছে?????

  • যাদের হিপের পরিমাপ কোমরের পরিমাপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং রক্তের পরিমাণ বেশি তাদের ব্রেইন স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।  
  • যাদের দৈনিক ২০মিনিট সাঁতার কাটা অথবা দৌড়ানোর অভ্যাস নেই।
  • যাদের ভাই বোন বা পিতামাতা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি।
  • যিনি অতিরিক্ত পরিমানে চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খায়,।
  • খাবারে যারা বাড়তি লবণ খান।
  • নিয়মিত দাঁতের যত্ন পরিচর্যা করেন না।  
  • যারা মুক্ত বাতাসে ভ্রমণ করেন না।
  • যাদের অলসতা ভাব আছে।
  • যারা অবিবাহিত যারা, বেশি হতাশায় ভোগেন এবং যারা সংবরণ করতে পারেন না তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্রেন স্টোক করার সম্ভাবনা খুব বেশি।

তাই আপনাদের কাছে পরামর্শ হলো উপরের কথা গুলো মেনে নিজের জীবন কে সুন্দর করে বাঁচুন ।