টিউমার হচ্ছে শরীরের যে কোন অঙ্গ বা জায়গায় কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এবং এই টিউমার যখন ব্রেইনের ভিতরে হয় তখন সেটাকে আমরা বলি ব্রেইন টিউমার।ব্রেইন টিউমার হলো মস্তিষ্কে যখন কোষের বৃদ্ধি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় তখন ব্রেইন টিউমারের সৃষ্টি হয়।
ব্রেইন টিউমার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। একটি হচ্ছে
- ক্যান্সার যুক্ত।
- আরেকটি হলো ক্যান্সার বিহীন টিউমার।
টিউমার মস্তিষ্কের ভিতর চাপ বাড়িয়ে তোলে এটা আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
এখন আমরা জানবো কেন আমাদের ব্রেইন টিউমার হয়…
কেন আমাদের ব্রেইন টিউমার হয়…
বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ব্রেইন টিউমার তখনই হয়
- যখন মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কোষগুলোর ডিএনএতে কোন ত্রুটি থাকে।
- শরীরের কোষগুলো ক্রমাগত বিভক্ত হয়ে যায় এবং মরে যায় যার পরিবর্তে অন্য কোন কোষ সৃষ্টি হয়।
- অনেক ক্ষেত্রে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়ে যায় তবে দেখা যায় পুরনো কোষগুলো সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয় না। যার ফলে কোষগুলো জমাট বেঁধে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।
- আবার অনেক সময় বংশগত কারণে ব্রেইন টিউমার হয়ে থাকে। অর্থাৎ বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন কারো ব্রেইন টিউমার থাকলে এটি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।
এখন আমরা জানবো ব্রেইন টিউমার কাদের বেশি হবার প্রবণতা রয়েছে……
কিছু টিউমার আছে ছোটদের বেশি হয়। আবার কিছু টিউমার আছে যা ৬০ বছরের উপরে গেলে হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে সব ধরনের টিউমার এর প্রতিক্রিয়ায় একরকম নয়। এক্ষেত্রে টিউমারটি এক এক রকমের প্রকাশ পায়। যার ফলে আমরা এভাবে বলতে পারবোনা কাদের বেশি হয়।
এক কথায় বলতে পারি, যে কোন বয়সের যে কোন পুরুষ বা মহিলার টিউমার হতে পারে। একেক ধরনের টিউমার শিশু বা মহিলা বয়স্কদের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। এটা সত্যি দুঃখজনক যে আমাদের দেশে ক্রমশ টিউমারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সঠিক পরিসংখ্যান এখনো পর্যন্ত আমাদের হাতে না আসার কারণে আপনাদের সাথে আমরা শেয়ার করতে পারছি না।
এখন আমরা জানবো টিউমার হলে কি কি লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়
ব্রেইন টিউমারের এর লক্ষন
ব্রেইন টিউমারের আকার এবং এর অবস্থানের এলাকার ওপর ভিত্তি করে ব্রেইন টিউমারের উপসর্গ পরিবর্তন হতে পারে। বিভিন্ন শারীরিক কার্যক্রমের জন্য মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ। তাই বলে যে এলাকায় ব্রেইন টিউমার গঠিত হয়েছে সেই মতো শারীরিক উপসর্গ দেখা যাবে। কারণ সব অঙ্গ একই ধরনের কাজ করে না।
অর্থাৎ কাজের উপর ভিত্তি করে এর উপসর্গ দেখা দিবে। তারপরেও স্বাভাবিকভাবে যেসকল উপসর্গগুলো ব্রেইন টিউমারের ক্ষেত্রে দেখা যায় গড়পড়তা ভাবে আমরা আজকে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
- সেটি হল মাথা বা ব্যাথা ধরা। ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত রোগীদের ২০ শতাংশের মধ্যেই প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে মাথাধরা। ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত রোগীদের অনিয়মিতভাবে মাথা ধরবে। খুব বেশি খারাপ লাগবে।
- তারপর বমি হতে পারে।
- মাথার খুলির নিচে চাপ বাড়ার মতো লাগতে পারে।
- কাশি হলে বা শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন করলে মাথা ধরা ও বেড়ে যাবে।
- ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত রোগীদের কারও কারও ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে খিঁচুনি। মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের জন্য খিঁচুনি হতে পারে।
- কোন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত রোগীর খিচুনির সঙ্গে হঠাৎ অচেতন হয়ে যেতে পারে।
- সামগ্রিক শারীরিক প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে অল্প সময়ের জন্য শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- ত্বকের রং বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে।
- স্মৃতিভ্রংশের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- তেজস্ক্রিয় বিকিরণ অস্ত্রপ্রচারের জন্য ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত রোগীদের স্মৃতিভ্রংশের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি, যেমন ডায়াল করার সময় ফোন নাম্বার ভুলে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে।
- গবেষকেরা জানিয়েছেন ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে একজন খুব কম বেশি অবসাদে ভোগে। এবং তাদের প্রিয় জন ও অবসাদের শিকার হয়। অবসাদের উপসর্গগুলো মধ্যে আছে রোগীর আনন্দ যেগুলো অতীতে তার কাছে বেশি মজার ছিল সেগুলোর নিরানন্দ হবে। নিদ্রাহীনতা অর্থাৎ ঘুম কমে যাবে। এমনকি আত্মহননের চিন্তা হবে।
- ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন এবং মেজাজে খামখেয়ালিপনা ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত রোগীর সাধারণত লক্ষন। তার ব্যক্তিত্ব আগে যে ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারত সেভাবে আর পারবে না অর্থাৎ যে সকল কাজ তার আগে বেশি ভালো লাগতো সেগুলা খামখেয়ালিপনা চলে আসতে পারে।
- এছাড়াও যে লোক আগে অনুপ্রাণিত থাকত কাজে সে সকল কাজে তার খামখেয়ালিপনা চলে আসবে।
- এছাড়াও স্থানীয় উপসর্গ অর্থাৎ মস্তিষ্কের টিউমার হয়েছে ওই স্থানটি আগেই পার্টিকুলার কাজগুলো করত সেই সকল কাজগুলো করবে না। অর্থাৎ মস্তিষ্ক যেহেতু একই কাজ করে না অর্থাৎ মস্তিষ্ক আলাদা আলাদা কাজের দায়িত্বে থাকে তাই যে সকল অংশে টিউমার হয় সে সকল অংশের কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
- মাথার খুলির নিচের এলাকায় যদি কোনো কারণে টিউমার হয়, যেখানে খুব কম জায়গা তাকে সেখানে যদি টিউমার হয় এবং সেটি যদি বাড়তে শুরু করে, সেটি ব্রেইনের অন্যান্য জায়গা গুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
- ব্যবহারে পরিবর্তন হয়।
- ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ক্লান্তি সাধারণ একটি উপসর্গ। এছাড়াও নিদ্রাহীনতা, দুর্বলতা, খিটখিটে ভাব, আকস্মিকভাবে আলস্য এবং একাগ্রতার অভাব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
উপরে যে সকল উপসর্গগুলো আমি আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম এগুলা খুব বেশি দেখা যায় টিউমারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে। এই ধরনের উপসর্গ যদি আপনাদের দেখা যায় তাহলে কাল বিলম্ব না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।