বয়স ৪০ বছরের বেশি বয়সের মধ্যে বা এর চেয়ে কম বয়সেও ফুস্ফুসে ক্যান্সার রোগটি হতে পারে। যাদের বাবা মা ভাই বোনের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বা ক্লান্ত হয়ে রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
ধূমপান না করলেও পরিবেশের রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে এবং পরিবেশ দূষণকারী জিনিস যেমন সিগারেটের ধোঁয়া, আর্সেনিক দূষণ এর সংস্পর্শে থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
বন্ধুরা ফুসফুস ক্যান্সার যেহেতু একটি মারাত্মক বিষয় বা মারাত্মক রোগ তাই এই ক্যান্সার হলে আমাদের দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কারন হল আমরা যদি কোনো কারণে এ ক্যান্সার রূপটি ফাইনাল স্টেজে চলে যায় তখন আর আমাদের করার কিছুই থাকে না। তখন সম্পূর্ণ জিনিসটি আমাদের হাতের বাইরে চলে যায়।
তাই বন্ধুদের জন্য আমার পরামর্শ যখনই আপনারা ক্যান্সার বা ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ দেখবেন সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
এখন আপনারা হয়তো বলতে পারেন লক্ষণগুলো কি???
বন্ধুরা এই নিয়ে আমরা আরেকটি পেইজ আপনাদের সাথে শেয়ার করে রেখেছি, আপনারা চাইলে আমাদের পেইজে গিয়ে ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি কি তা জেনে নিতে পারেন।
ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা আমরা কিভাবে করতে পারিঃ
সার্জারিঃ
সার্জারিকরে আমরা এর চিকিৎসা করতে পারি। ফুসফুসে টিউমার অপসারণ এর জন্য সার্জারি করা হয়। ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে সার্জারির মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ টিউমার অপসারণ করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারের মধ্যে মধ্যম পর্যায়ের সার্জারি করা যায়। তবে ফুসফুস ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ৪০% এর কম রোগীকে সার্জারি করা হয়। ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য সার্জারি হলো অন্যতম প্রধান চিকিৎসা। তবে সার্জারি নির্ভর করে টিউমার এর ধরন, আকৃতি, অবস্থান এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর।
রেডিয়েশন থেরাপিঃ
রেডিয়েশন পদ্ধতির সর্বাধুনিক সংযোজন পদ্ধতি পদ্ধতি। পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী চিকিৎসা হিসেবে রেডিও থেরাপি দেওয়া হয়। রেডিওথেরাপি কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
- একটা হল সিম্পল রেডিওথেরাপি এবং
- অপরটি হল কমপ্লেকজেটিভ রেডিওথেরাপি।
এখন আসা যাক সিম্পল রেডিওথেরাপির মধ্যে রয়েছে, এমন একটা থেরাপি যা দেওয়া হবে তা নির্ভর করবে রোগীর শারীরিক অবস্থার, টিউমারের অবস্থান ইত্যাদির ওপর।
কম্প্লেক্সিটি রেডিওথেরাপি হল, সার্জারি এবং কেমোথেরাপিএবং এর সাথে সাথে যখন রেডিও থেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে, তখন তাকে কম্প্লেক্সিটি রেডিওথেরাপি বলে। কম্প্লেক্সিটি রেডিওথেরাপি হল, সার্জারির একটি অংশ, ট্রিটমেন্ট এর সময় এগুলো সমন্বয় করে ট্রিটমেন্ট করা হলে কার্যকারিতা আরো বেড়ে যায়। অর্থাৎ ক্যান্সার ফাইনালে পৌঁছে যাবার পর ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে টিউমার অপসারণের জন্য সার্জারির সাথে কেমোথেরাপি ও রেডিও থেরাপি দেওয়া হয়।
প্রতিরোধের উপায়
জনসচেতনতাই প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। ফুসফুসের ক্যান্সার কোন জীবাণু ঘটিত রোগ নয়, যা আমি বারবার বলি। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও এর সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভের কোন চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। যদিও প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণ শুরু করলে মোটামুটি আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। এ রোগটি জীবাণুঘটিত না হওয়ার কারণে এর প্রতিষেধক আবিষ্কার এ বিজ্ঞানীরা এখনো সক্ষম হতে পারেনি। তাই জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে হবে। মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করে যতটা সম্ভব প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে ফুসফুস ক্যান্সারে মৃত্যুর হার আমাদের কমিয়ে আনতে হবে।
ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য অন্যতম দায়ী হলো ধূমপান। তার উপর ইদানীংকালে নারীদের মাঝেও ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবার কারণে তাদের মাঝেও উল্লেখযোগ্যহারে ফুসফুস ক্যান্সারের আক্রমণের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যদিও ধূমপায়ী ব্যক্তিদের মাঝে এই ক্যান্সার হবার আশঙ্কা বেশি। কিন্তু তারপরেও অধূমপায়ীরা ও যে এই ক্যান্সার থেকে একেবারে মুক্ত তা নয়।
নগরায়নের এই বিশ্বে শিল্প-কলকারখানা গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়া ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ইত্যাদি এই রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
ক্যাডমিয়াম ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টিতে এতো বেশি ভূমিকা রাখে যে সমসাময়িককালে জাহাজশিল্পে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে উন্নত বিশ্বে পারমাণবিক বর্জ্য ক্যান্সারের একটি বড় কারণ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
ফুসফুস প্রদাহজনিত রোগ গুলোর মধ্যে যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ভালো হবার পর ফুসফুসের আক্রমণের স্থানে ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। ফুসফুসের যেকোন স্থানে ক্যান্সার আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের উপসর্গ ও লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে এক রকম নয় বিধায় খুব সহজে এর লক্ষণ শনাক্ত করা যায় না। এর উপসর্গ বা লক্ষণসমূহ খুবই সাধারণ রোগের মত, তাই রোগীরা খুব সহজে এর লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে না। এ লক্ষন গুলো হলো ……
- কাশির সাথে রক্ত
- শ্বাসকষ্ট
- আক্রান্ত স্থানে বুকে ব্যথা।
- হালকা জ্বর
- খাবারে অনীহা
- ওজন হ্রাস ইত্যাদি।
তাই বন্ধুরা, আপনাদের উচিত নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ফুসফুসের চেকআপ করিয়ে নেওয়া। যেহেতু ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষন দ্বারা আপনার কোন বোঝার উপায় নেই যে আপনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত, তাই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ডাক্তারের কাছে গিয়ে শরীরটা চেকআপ করে নিতে হবে। ধন্যবাদ।