ব্যস্তময় জীবনে আমরা মানসিক ও শারিরীকভাবে এত কাজের চাপে থাকি যে আমাদের শরীরে রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া এখন একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে । এটাকে আমরা সাধারণ ভাবে নিলেও এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
তাই আমাদের সবার জানা দরকার শরীরে রক্ত চাপ বেড়ে গেলে বা কমে গেলে আমাদের কি করা দরকার ।
তবে আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব শরীরে রক্ত চাপ কমে গেলে কি করবেন।
চলুন জেনে নিই,
নিন্ম রক্ত চাপ বা লো ব্লাড প্রেসার কাকে বলে?
একজন সাধারন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ হওয়া উচিত ১২০/৮০ এর উপর ভিত্তি করে উচ্চ রক্তচাপ আর নিন্ম রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়। প্রেসার বৃদ্ধি বা কমা দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
রক্তের চাপ যদি ৯০/৬০এর আশেপাশে থাকে তাহলে একে লো প্রেসার বা নিন্ম রক্তচাপ বলা হয়।
অনেকেই লো প্রেসার নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকেন। লো প্রেসার যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তবে এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক লো প্রেসারের কারণ, লক্ষণ ও এর প্রতিকারঃ
সবার আগে আমরা জানবো
লো ব্লাড প্রেসার আমাদের কেন হয়???
১।শরীরে পানি শূন্যতার কারণে।
২। সঠিক খাবার না খাওয়ার কারণে।
৩। অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে।
৪। দুঃশ্চিন্তা ও অপুষ্টির কারনে।
৫। রক্তশূন্যতা,
৬। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
৭। গর্ভবস্থায় বিভিন্ন ধরনের হরমোনের অসামঞ্জস্যতা ।
৮। এছাড়া অন্যান্য কারণে আমাদের ব্লাড প্রেসার লো হয়ে যেতে পারে।
নিন্ম রক্ত চাপ বা লো প্রেসারের লক্ষণঃ
১। মাথা ঘুরানো
২। ক্লান্তি
৩। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
৪। বমি বমি ভাব
৫।বুক ধড়ফড় করা অবসাদ
৬। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা
৭। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
৮। অতিরিক্ত ঘাম.
৯। ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত বমি হওয়া
১০। দেহের ভিতরে কোন কারণে রক্তক্ষরণ হলে যেমন রক্ত বমি পায়খানা সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে।
১১। শারীরিক ভাবে আঘাত আঘাত প্রাপ্ত বা দুর্ঘটনার ফলে রক্তপাত ঘটায় এবং
১২। অপুষ্টিজনিত কারণে লো ব্লাড প্রেসার দেখা দিতে পারে আবার
১৩। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে প্রথম ছয় মাস হরমোনের প্রভাবে ব্লাড প্রেসার লো থাকতে পারে এই সময় মাথা ঘোরানো হালকা অনুভূত হওয়া মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া থেকে হঠাৎ ওর মাথা ঘুরে যাওয়ার ভারসাম্যহীনতা, চোখে অন্ধকার দেখা, ঘনঘন শ্বাস প্রশ্বাস, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, খুব বেশি শীত অনুভূত হওয়া।
১৪। অস্বাভাবিক স্পন্দন গতি বেড়ে যাওয়া
নিন্ম রক্ত চাপ বা লো প্রেসার হলে কি করা উচিতঃ
এখন আমরা জানবো যদি হঠাৎ করে আমাদের ব্লাড প্রেসার কমে যায় তখন ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমাদের কি করা উচিত ।
বা দীর্ঘমেয়াদি যদি আমাদের লো ব্লাড প্রেসার থেকে থাকে তাহলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে আমরা আমাদের ব্লাড প্রেসারকে স্বাভাবিক রাখতে পারি……
১। লবণ রক্তচাপ বাড়ায় কারণ । এতে সোডিয়াম আছে, তবে পানিতে বেশি লবণ না দেওয়ায় ভালো।
সবচেয়ে ভালো এক গ্লাস পানিতে ২ চামচ চিনি ও ২ চা চামচ লবণ মিশিয়ে খেলে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা এই পদ্ধতিটা বর্জন করতে পারেন।
অর্থাৎ যাদের লো ব্লাড প্রেসার আছে বা হঠাৎ করে প্রেসার লো হয়ে যায় তাদের উচিত এক গ্লাস পানিতে 2 চামচ চিনির সাথে দুই চামচ লবণ মিশিয়ে খেয়ে নেওয়া ডায়াবেটিস রোগীরা এক্ষেত্রে এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করবেন না।
২। হঠাৎ করে লো প্রেসার দেখা দিলে এক কাপ কফি খেয়ে নিতে পারেন।
৩। বিটের রস ব্লাড চাপকে বা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।
এই জন্য বিটের রস নিন্ম রক্তচাপ রোগীদের জন্য ভালো। তাই ব্লাড প্রেসার লো হলে এক গ্লাস বীটের রস খেতে পারেন ।
৪। লো প্রেসার হলে পাঁচটি কাঠবাদাম বা ১৫ থেকে ২০টি চিনা বাদাম খেতে পারেন।
এটা আপনার প্রেশারকে বাড়াতে সাহায্য করবে।
৫। পুদিনায় ভিটামিন-সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম সহ বিভিন্ন উপাদান থাকে যা দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক অবসাদ দূর করে।
পুদিনা হলো তার মধ্যে অন্যতম। এর পাতা বেটে নিয়ে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক করবে।
৬। আদিকাল থেকে যষ্টিমধু বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এক কাপ পানিতে ১ টেবিল চামচ যষ্টিমধু দিয়ে রেখে দিন। ২/৩ ঘণ্টা পর পান করুন। তাছাড়া আপনি চাইলে মধু খেতে পারেন। কারণ মধু ও আমাদের ব্লাড প্রেসার কে বাড়িয়ে দেয়।
৭। পানিশূন্যতা ও ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার কারণে নিন্ম রক্তচাপ হয়ে থাকলে খাবার স্যালাইন খেলে প্রেসার বেড়ে যাবে।লো ব্লাড প্রেসারে খাবার স্যালাইন সবচেয়ে উপযোগী।
তাই আপনাদের কেউ যদি হঠাৎ করে ব্লাড প্রেসার ফল করেন সাথে সাথেই হাতের কাছে অন্য উপাদান না থাকলেও একটি খাবার স্যালাইন খেয়ে নিয়েন। আর তাও যদি না থাকে খাবার স্যালাইন ঘরে তৈরি করে খেয়ে নিবেন।
তাহলে বন্ধুরা , জানতে পারলেন হঠাৎ করে ব্লাড প্রেসার যদি কমে যায় কিভাবে তা আপনারা ঘরোয়া পদ্ধতিতে সমাধান করবেন।