মাতৃত্বজনিত দাগ দূর করার অত্যন্ত কার্যকরী কিছু প্রাকৃতিক উপায়

মাতৃত্ব শব্দটা প্রত্যেকটা নারীর জীবনে অত্যন্ত আনন্দের এবং অহংকারের। একজন নারীর মা হওয়ার  মধ্যে রয়েছে তাঁর জীবনের সমস্ত সার্থকতা। তবে এই মা হওয়া বিষয় টা সব সময় সবার জন্য কাঙ্ক্ষিত হয়না। গর্ভাবস্থায়  অসংখ্য নারী  মাতৃত্বকালীন দাগ ইংরেজিতে স্ট্রেচ মার্ক এর সম্মুখীন হন । বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে এই দাগ নিবারণের জন্য নানান  পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। মাতৃত্বকালীন দাগ দূর করার জন্য রয়েছে বিভিন্ন সার্জারি তবে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ভয়ে সেটি অনেকেই করাতে চান না। বাজারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী তবে কোনটা আসল কোনটা নকল অনেকেই এসবে আস্থা রাখতে পারে না । তাই সুপ্রিয় বন্ধুরা আমাদের আজকের আলোচনাটি সাজিয়েছি  সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া ভাবে । কিভাবে মাতৃত্বজনিত দাগ দূর করা যায় তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপায় নিয়ে। তাহলে চলুন বন্ধুরা দেখি নিয়েছে আর মাতৃত্বজনিত দাগ দূরীকরণের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী কিছু প্রাকৃতিক উপায়।

মাতৃত্বজনিত দাগ দূর করার অত্যন্ত কার্যকরী কিছু প্রাকৃতিক উপায়ঃ

 ডিমের সাদা অংশঃ

 প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে আমরা সবাই ডিম ব্যবহার করে থাকি। আর এই ডিমের সাদা অংশে রয়েছে মাতৃত্বজনিত দাগ সম্পূর্ণরূপে দূর করার অত্যন্ত কার্যকরী কিছু প্রাকৃতিক উপাদান। ডিমে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড ও প্রোটিন যা ত্বককে নতুন জীবন দান করে। প্রতিদিন গোসলের পূর্বে ডিমের সাদা অংশ আলাদা করে নিয়ে । হাতের সাহায্যে ভালোভাবে মিহি করে নিয়ে মেকআপ ব্রাশ দিয়ে মাতৃত্বজনিত দাগ এর স্থানে লাগিয়ে নিন। ডিমের সাদা অংশ সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে গেলে গোসল করে নিন এবং পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মাতৃত্বজনিত দাগ এর স্থান মুছে নিয়ে অলিভওয়েল লাগিয়ে দিন যেন আর্দ্রতা বজায় থাকে। নিয়মিত তিন থেকে চার সপ্তাহ ড়িমের সাদা অংশ ব্যবহার করলে মাতৃত্বজনিত দাগ অনেকাংশই দূরীভূত হয়।

 অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীঃ

 অ্যালোভেরায়  রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট সহ এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের ত্বক এবং শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং এটি মাতৃত্বজনিত দাগ দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী। একটি এলোভেরার সতেজ পাতা নিয়ে তা পরিষ্কার  কিছুর সাহায্যে কেটে। পাতার ভেতরের বিদ্যমান জেল চামচ বা আঙুলের সাহায্যে বের করে নিন। এরপর ওই জেল মাতৃত্বজনিত দাগ আগে ভালোভাবে স্ক্রাব করে নিন। এরপর 10 থেকে 12 মিনিট সময় দিয়ে শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এতে করে মাতৃত্বজনিত দাগ দূরীভূত হবে।

 আলুর রসঃ

 তরকারি হিসেবে যেমন আলু সব জায়গাতেই ব্যবহার করা যায় ঠিক তেমনি ত্বকের যত্নেও আলুর রয়েছে অত্যন্ত কার্যকারিতা। আলুতে বিদ্যমান ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের ত্বকের দাগ দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। প্রথমে বড় সাইজের একটি আলু পরিষ্কার করে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ব্লেন্ড কৃত আলুর পেস্ট মাতৃজনিত দাগ এর উপর ভালোভাবে স্ক্রাব করে নিন। এরপর 15 থেকে 20 মিনিট সময় দিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত কয়েক সপ্তাহ ব্যবহারে এটি মাতৃত্বজনিত দাগ সম্পূর্ণরূপে দূর করবে।

 লেবুঃ

 লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর লেবু অতিরিক্ত পরিমাণে এসিডিক তাই এটি বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। প্রথমে লেবু গোল করে কেটে নিতে হবে। এরপর কাটা অংশটি মাতৃত্বজনিত দাগের উপর ভালভাবে মাসাজ করতে হবে। এভাবে তিন থেকে চার মিনিট ম্যাসাজ এরপর 10 মিনিট মতো শুকানোর জন্য সময় দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। নিয়মিত কিছুদিন লেবুর রস ব্যবহারে মাতৃত্বজনিত দাগ দূর হবে।

চিনিঃ

 মাতৃত্বজনিত দাগ এবং বিভিন্ন দাগ দূরীকরণের জন্য চীনের একটি মিশ্রণ অত্যন্ত উপযোগী। প্রথমে ১ চামচ বাদাম তেল এবং তিন থেকে চার ফোঁটা লেবুর রস একটা  বাটিতে   নিতে হবে। এরপর বাটিতে  চিনি দিয়ে মাতৃত্বজনিত দাগ এর উপর ভালোভাবে স্ক্রাব করে নিতে হবে যতক্ষণ না চিনি মিশে যায়। প্রতিদিন গোসলের পূর্বে মাসখানেক এই মিশ্রণটি ব্যবহার করলে মাতৃত্বজনিত দাগ দূর হয়।

 ক্যাস্টর অয়েলঃ

 ত্বককে আদ্র রাখতে ত্বকের বিভিন্ন বলিরেখা, দাগ, ব্রণের দাগ দূর করতে ক্যাস্টর অয়েল  বহুকাল ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাতৃত্বজনিত দাগ দূর করতে দাগের উপর ক্যাস্টর অয়েল  ভালোভাবে মালিশ করে একটি পাতলা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে দাগ ঢেকে দিতে হবে। তারপর একটি কুসুম গরম ওয়াটার ব্যাগ। ওই পাতলা কাপড়ের উপর রেখে দিয়ে 30 মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর গোসল করা যাবে। নিয়ম মেনে ক্যাস্টর অয়েল মাত্র এক থেকে দু মাস ব্যবহার করলেই মাতৃত্বজনিত দাগ দূরীভূত হবে।

হলুদ এবং সরিষার তেলঃ

 হলুদের গুঁড়া এবং সরিষার তেল মিশিয়ে ঘন একটি মিশ্রণ তৈরী করে নিন। এরপর মিশ্রণ টি মাতৃত্বজনিত দাগ এর ওপর । ভালোভাবে স্ক্রাব করেনিন।। সপ্তাহে তিন থেকে চার বার করে এই মিশ্রণটি ব্যবহার করলে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মাতৃত্বজনিত দাগ দূর হবে।

 অলিভ অয়েলঃ

 মাতৃত্বজনিত দাগ দূর করার জন্য অলিভ অয়েল অত্যন্ত কার্যকরী। অলিভ অয়েলে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান  দাগ দূরীকরণে অত্যন্ত কার্যকরী। তাই মাতৃত্বজনিত দাগ আগে ভালোভাবে অলিভ অয়েল মালিশ করে নিন। অলিভ অয়েল মালিশ করার পর ধুয়ে নিয়ে আর প্রয়োজন নেই এটি যতক্ষণ আপনার ত্বকে থাকবে ততক্ষণই আপনার জন্য উপকারী।

 শিয়া বাটারঃ

 অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অত্যন্ত মশ্চারাইজিং ক্ষমতার অধিকারী এই শিয়া-বাটার দাগ উপশমে অত্যন্ত কার্যকরী। শিয়া বাটার নিয়ে মাতৃত্বজনিত দাগ এর উপর সরাসরি প্রয়োগ করতে হবে এবং কিছু সময় মালিশ করেন নিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

 গর্ভাবস্থায় কোনভাবেই উপরোক্ত উপাদান সমূহ নিয়ে বেশি পরিমাণে মালিশ করবেন না।

এতে গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

 তাই সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে তারপর উপরোক্ত নিয়মাবলী পালন করুন।

 উপরিউক্ত উপাদান সমূহের মধ্যে কোন উপাদান যদি আপনার ত্বকের জন্য এলার্জিক হয়ে থাকে তাহলে সেটি ব্যবহারে বন্ধ থাকুন।

 নিজেদের ত্বকের ষোলআনা সৌন্দর্যের জন্য আমরা অনেক কিছুই করে থাকি। তাই মাতৃত্বজনিত দাগ নিয়ে কোনো নারী বা কোনো মা যেন আর কখনও হীনমন্যতায় না ভোগেন সেজন্য আমাদের এই নির্দেশিত পন্থাসমূহ অনুসরণ করে সম্পূর্ণরূপে মাতৃত্বজনিত দাগ দূর করুন। পৃথিবীর সকল মায়েরা থাকুন  সুস্থ, সুন্দর এবং দাগহীন।

 ধন্যবাদ