ব্যক্তি জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব

আমরা মানুষেরা ব্যক্তির বাহ্যিক স্বাস্থ্য অর্থাৎ শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য কত কিছুই না করে থাকি। কিন্তু সে অনুপাতে মানসিক স্বাস্থ্যের কথা যদি আমরা বলি। তাহলে আমরা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকি?

 এই প্রশ্নের উপর অন্য আরেকটা প্রশ্ন আসতে পারে! সেটা হল। মানসিক স্বাস্থ্য কি শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ?। এই মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব আপনার ব্যক্তি জীবনে কতটা? সেই বিষয়ে মূলত আমরা আজকের আলোচনা সাজিয়েছি। তাহলে চলুন বন্ধুরা দেখে নেয়া যাক ব্যক্তিজীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বঃ

মানসিক স্বাস্থ্য কিঃ

 মন আর মানসিক স্বাস্থ্য দুটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে আমাদের মন অভ্যন্তরীণ আচরণ এবং আবেগের সমষ্টি।মূলতঃ মানসিক স্বাস্থ্যের ভিন্নতার কারণেই আমরা মানুষেরা কোন ১টি বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা ধারা পোষণ করি। আমরা কি চিন্তা করি? কি অনুভব করি? এ সব বিষয়ই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে উপস্থাপন করে।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি। মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ চিন্তাধারা,ভাব,আবেগ,ও বুদ্ধির সমন্বয়ে গঠিত স্বাস্থ্য।

★★যে সকল বিষয়ের উপর মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করেঃ

 যে সমস্ত বিষয়ের উপর নির্ভর করে ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে মূলত সেই সমস্ত বিষয়কে আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের উপাদান বলে থাকি।। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রধান প্রধান উপাদান গুলো হচ্ছেঃ

★। ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক অবস্থা।

★। সামাজিক অবস্থান।

★। পারিবারিক অবস্থা।

★। মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

★। চিত্ত বিনোদনের সুযোগ।

★। ব্যক্তির অর্থনৈতিক অবস্থা।

★। বন্ধুবান্ধব তথা সহপাঠীদের সহচার্য।

★। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম তথা ঘুম।

★। ব্যক্তির দায়িত্ব এবং কর্তব্যের পরিধি।

 উপরুক্ত বিষয়সমূহ একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।

 মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বঃ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO এর মতে স্বাস্থ্য হল ব্যক্তির শারীরিক , মানসিক এবং সামাজিক এই তিন অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয়।

 এই সংগা থেকে আমরা বলতে পারি শুধুমাত্র ব্যক্তির শারীরিক এবং সামাজিক অবস্থার সমন্বয়ে একজন ব্যক্তি কখনোই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারেন না।বরং তাকে অবশ্যই মানসিকভাবে অসুস্থ হতে হবে।

চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের দৈনন্দিন বা ব্যক্তি জীবনে কি পরিমান প্রভাব বিস্তার করে এবং এর গুরুত্ব কতটা?

কার্য দক্ষতা বৃদ্ধিঃ

 সুস্থ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য। ব্যক্তির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিবিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত।। তার তুলনায় মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তিগণ অনেকাংশেই এসকল মরণব্যাধি থেকে মুক্ত।গবেষণায় এটিও প্রমাণ হয়েছে যে, মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি গনের রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা, মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের তুলনায় অনেকাংশেই ভালো।

মরণব্যাধি প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বঃ

বিভিন্ন মানসিক রোগ যেমন সিজোফ্রেনিয়া,অল্প ক্ষণস্থায়ী মানসিক ব্যাধি,বিভ্রম ব্যাধি,শেয়ার্ড সাইকোটিক ডিসঅর্ডার,ডায়াবেটিস সহ হৃদরোগের বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ মানসিক স্বাস্থ্যের অবহেলার কারণে হয়ে থাকে।। কাজেই মরণব্যাধি ঠেকাতে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেয়া অপরিহার্য।

সুস্বাস্থ্যের উপর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাবঃ

সুস্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয় দুটি একে অপরের পরিপূরক।মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া কখনোই আমরা স্বাস্থ্য কল্পনা করতে পারিনা। বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা,অতি আবেগের বশবর্তী হওয়া। ইত্যাদি মানসিক ভারসাম্যহীনতা নিয়ে আমরা কখনোই একটি সুস্বাস্থ্য গঠন করতে পারিনা।। অতএব সুস্বাস্থ্য গঠনে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যক্তি এবং সমাজ জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বঃ

ব্যক্তি জীবনে একজন মানসিক দুশ্চিন্তায়  জর্জরিত ব্যক্তির তুলনায় একজন মানসিক ভাবে সুস্থ   ব্যক্তি অনেক বেশি সার্থক এবং সবার কাছে অতি প্রিয়।মানসিক চাপ সবসময়ই একজন মানুষকে দুশ্চিন্তা,অনিদ্রা, অনাহার,ইত্যাদিতে ভোগাই। যা ব্যাক্তির ব্যক্তিক, সামাজিক, পারিবারিক জীবনে অত্যন্ত খারাপ প্রভাব বিস্তার করে।

★★মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপায়ঃ

★বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন।

★ নিজের খাদ্যাভ্যাস নিয়মমাফিক এবং সময়ানুগ করুন।

★ নিজেকে একঘেয়েমির মধ্যে না রেখে চিত্তবিনোদন উপভোগ  করুন।

★বড় কোন ঝামেলার সম্মুখীন হলেও। তার নিজের মধ্যে চেপে না রেখে বন্ধুবান্ধব বা সহপাঠীদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

★ বিভিন্ন মানসিক রোগের লক্ষণ নিজের মধ্যে দেখা দিলেই প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন অথবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

★পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম গ্রহণ করুন।

★শরীর এবং মন দুটোই সুস্থ রাখার জন্য খেলাধুলা অথবা ব্যায়াম করুন।

★ একটু সুযোগ খুঁজে সময় বের করে নিতে পারলেই ঘুরে আসুন পাহাড় ঝর্ণা কিংবা সমুদ্র সৈকত থেকে।

★ যতটুকু সম্ভব নিজের মনকে মানসিক চাপ দেয়া থেকে এবং দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখুন।

★ নিজেকে সবসময়ই কোন না কোন কাজে সচল রাখার চেষ্টা করুন।

★নিজের শখের কোনো কাজ থাকলে  যেমনঃ বাগান করা, ঘুরতে যাওয়া,ইত্যাদি কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।

 মনে রাখবেন আপনার সুস্বাস্থ্য সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর।

২০১৮-১৯ মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে প্রায় ১৭% মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত  ;অর্থাৎ দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষই মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এবং তার মধ্যে অধিকাংশ মানুষই তাদের চিকিৎসা করাতে আগ্রহী নন।

       সুস্বাস্থ্য এবং সুবুদ্ধি জীবনের সবচেয়ে বড় নিয়ামত

             -পাবলিলিয়াস সাইরাস

মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবছর 10 অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়।অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও দিবসটি পালন করা হয় যথাযথ আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে।। এই বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলঃ। সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য; অধিক বিনিয়োগ, অবাধ সুযোগ।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি ব্যক্তির ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন,সমাজ জীবন,এবং জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই  মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব অত্যন্ত অপরিহার্য।

     ধন্যবাদ