পৃথিবীতে এমন কিছু শিশু জন্ম নেয়, যারা স্বাভাবিক শিশুদের মতো নয়। তাদের মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন
- কেউ কানে শুনে না
- কেউ চোখে দেখেনা
- কারো আচরণ বা দেহের গঠন স্বাভাবিক নয় এদের গড়ে তুলতে বিশেষ ব্যবস্থা বা সেবার প্রয়োজন হয়।
মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা যাতে শিশুর বৈশিষ্ট্য অনুসারে চাহিদাগুলো ঠিকমতো পূরণ করতে পারে, যাতে শিশুটি সমাজের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, এজন্য আমাদের বিশেষ যত্নবান হওয়া আবশ্যক।
প্রতিবন্ধী শিশু কাকে বলে???
যেসব শিশুর শারীরিক ক্ষমতা, মানুষের সংবেদন শীল ক্ষমতা, সামাজিক ভাব বিনিময় দক্ষতা, ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য স্বাভাবিক শিশুর তুলনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কম থাকে তাদেরকে প্রতিবন্ধী শিশু বলা হয়।
যাদের দেহের কোন অঙ্গ যেমন হাত, পা দুর্ঘটনা স্বভাবে চোখে দেখেনা কানেও শুনেনা বুদ্ধিমত্তা কম, তারায় প্রতিবন্ধী শিশু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ………
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। আমাদের সমাজের প্রতিবন্ধী শিশু সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাদের প্রতি সবার ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে।
তাছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুটিও নিজেকে সবার থেকে আলাদা ও অসহায় মনে করবেনা।
প্রতিবন্ধী শিশুকে যদি আমরা ভাগ করে দেখি স্বভাবত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।
- শারীরিক প্রতিবন্ধী
- দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
- শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী
- বুদ্ধি ও মানসিক প্রতিবন্ধী
- বহু প্রতিবন্ধী
প্রথমে আসা যাক শারীরিক প্রতিবন্ধী
যেসব শিশু স্বাভাবিক মানুষের মতো শারীরিক কর্মকাণ্ড চলাফেরা শরীরের অঙ্গ ব্যবহার বা সঞ্চালন করতে পারে না, তাদের শারীরিক প্রতিবন্ধী বলা হয়ে থাকে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
যারা চোখে খুব সামান্য দেখে, বা চোখে দেখতে পায় না, বা দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয় তাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলা হয়। যেমন অনেকে আলো-আঁধারে পার্থক্য বুঝতে পারে কিন্তু কোন বস্তুর আকার বুঝতে পারে না আবার অনেকে বড় আকৃতির বস্তু দেখতে পায় কিন্তু ছোট আকৃতির বস্তুকে দেখতে পায়না।
শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী
শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী যারা স্রবন সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করে বা না করে কেবল কানের সাহায্যে অন্যের কথা শুনতে পায় না তাদের শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলা হয়।
বুদ্ধি বা মানসিক প্রতিবন্ধী
বুদ্ধি বা মানসিক প্রতিবন্ধী যে সকল শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতা, বুদ্ধি বিকাশে ধীরগতি, শিক্ষা গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সুস্পষ্টভাবে কম বুদ্ধি, পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা যাদের তেমন একটা নেই, সামাজিক ও আচরণগত সামঞ্জস্যতা বিধান করার ক্ষমতা যাদের থাকে না, তাদেরকে মানুসিক প্রতিবন্ধী বলা হয়ে থাকে।
বহু প্রতিবন্ধী
কিছু কিছু শিশুর একাধিক প্রতিবন্ধিকতা থাকতে পারে। তাদের বহু প্রতিবন্ধী বলা হয়ে থাকে। যেমন মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর শারীরিক দৃষ্টি বা শ্রবণ প্রতিবন্ধী ও থাকতে পারে।
কেন শিশুরা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে??
কেন শিশুরা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে বা প্রথম জন্মাবার পরে কেন প্রতিবন্ধী হয়ে যায় অর্থাৎ প্রতিবন্ধকতার কারণ আমরা এখন ব্যাখ্যা করব।
বিভিন্ন কারণে একটি শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে একে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
- জন্মের পূর্বকালীন কারণ
- শিশু জন্মের সময় এর কারণ
- শিশু জন্মের পরবর্তী কারণ
জন্মের পূর্ববর্তী কারণে
মায়ের রোগসমূহ
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে মা যদি বিভিন্ন ম্যালেরিয়া, রাস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হন, তবে গর্ভস্থ শিশু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। এছাড়া মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনির সমস্যা, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা ইত্যাদি শারীরিক অবস্থায় গর্ভবতী হলে শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে।
মায়ের অপুষ্টি
গর্ভবতী মা যদি দীর্ঘদিন ধরে রক্তস্বল্পতায় ভোগেন বা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না খান তবে ভ্রূণের গঠনগত বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়। মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়। ফলে শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে।
ওষুধ গ্রহণ
গর্ভবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ অনেক ওষুধ ভ্রূণ সৃষ্টিতে বাধা সৃষ্টি করে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া উচিত। তা না হলে শিশুর যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে।
মায়ের বয়স
মায়ের বয়স শিশুর প্রতিবন্ধিকতার হওয়ার জন্য দারুণ ভাবে দায়ী। যেমন গর্ভধারণের ক্ষেত্রে মায়ের বয়স কম বা বেশি দুইটি শিশুর জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অপরিণত বয়সে মায়ের প্রজনন অঙ্গ সম্পন্ন হয় না। বেশি বয়সে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যাবলীর হয়না।১৮ বছর পূর্বে ৩০ বছরের পরে যেসব মহিলা প্রথম সন্তান দেন সেসব শিশু প্রতিবন্ধী হবার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।
গর্ভাবস্থায় মা যদি ঘন ঘন খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত হন, তবে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে অক্সিজেনের অভাব ঘটায়। মস্তিষ্কের ক্ষতি হয় ফলে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
জন্মের সময়ই এর কারণে
শিশু জন্মের সময় যদি দীর্ঘ হয় অথবা শিশু জন্মের সময় শিশুর গলায় নাড়ী পেছিয়ে যায় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয় অথবা জন্মের পর শিশুর যদি অক্সিজেনের অভাব হয় মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট হয়। পরবর্তীতে সে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতে পারে। এছাড়াও জন্মের আগে যদি শিশুর কোথাও কোনো ব্যথা পায় অথবা মাথায় আঘাত পায় বা মাথায় চাপ লাগে তাহলে শিশুর মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হতে পারে অথবা কোন মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট হয়ে শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে।
শিশুর জন্মের পরেই যে সকল কারণে শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারেঃ
শিশুর জন্মের পরেই যে সকল কারণে শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে
- শিশু জন্মের পরে যদি জন্ডিস হয় এবং তাতে যদি বিলিরুবিনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে তা শিশুর মস্তিষ্কের কোষ কে অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং শিশুর মানসিক প্রতিবন্ধী হয়।
- এছাড়াও শিশু ছোটবেলায় পড়ে গিয়ে বা শারীরিক ভাবে নির্যাতিত হয়ে শিশুর শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
- এছাড়াও খাবারের অভাবে অর্থাৎ সুষম খাবারের অভাবে পুষ্টিহীনতায় শিশুর শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
- ছোটবেলায় বিভিন্ন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে শিশুর শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
- আর্সেনিকযুক্ত পানি কোনভাবে শিশুর শরীরে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়া ঘটে শিশু মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
উপরে যে কারণগুলো বললাম এই সকল কারণে কোনো শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে। তাই আমাদের খেয়াল রাখা উচিত একটি শিশুকে সুস্থ জীবন দান করতে আমাদের উপরে যে সকল কারণে শিশু প্রতিবন্ধী হয় এই সকল কারণগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা।
ধন্যবাদ