স্বামী ও স্ত্রীর রক্তের গ্রুপের প্রভাব কি কোন কারনে সন্তানের উপর পড়তে পারে কিনা সে বিষয়ে আমরা কথা বলব।
এ জন্য বিয়ের আগে বর ও কনের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার আগে প্রথমে আমাদের রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে কিছু কথা জানা দরকার।
প্রধানত রক্তের গ্রুপকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়
একটি হল A গ্রুপ
B গ্রুপ
O গ্রুপ
আরেকটি হলো
Rh ফ্যাক্টর
Rh ফ্যাক্টর কি সেটা এখন একটু সংক্ষেপে আমরা বলব:
Rh ফ্যাক্টর নিয়ে কথা বলার আগে একটু জেনে নিই…..
Rh ফ্যাক্টর দু‘ভাগে ভাগ করা হয় ……
Rh ফ্যাক্টর পজিটিভ
Rh ফ্যাক্টর নেগেটিভ
এখন আসা যাক Rh ফ্যাক্টর বিষয়টি কি……
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে রেছার্জ বানরের লোহিত কণিকায় এক ধরনের এন্টিজেন আবিষ্কার করেন। এই এন্টিজেন কে রেছার্জ Rh ফ্যাক্টর বলে।
পরবর্তীতে মানুষের লোহিত রক্তকণিকা দিয়ে এদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে বিজ্ঞানীরা গবেষণায় প্রমাণ করেছে প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের লোহিত কণিকায় Rh ফ্যাক্টর বিদ্যমান থাকে। যেসব মানুষের লোহিত রক্তকণিকায় Rh ফ্যাক্টর উপস্থিত থাকে না তাদেরকে Rh ফ্যাক্টর নেগেটিভ বলা হয় আর যাদের লোহিত রক্ত কণিকায় Rh ফ্যাক্টর থাকে তাদেরকে Rh ফ্যাক্টর পজিটিভ বলা হয়ে থাকে।
যদি কোন Rh ফ্যাক্টর নেগেটিভ গ্রুপের ব্যক্তিকে Rh ফ্যাক্টর পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয় তখন প্রথমবার সাধারণত কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু এর বিরুদ্ধে রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে ফলে রোগী যদি আবার কখনো পজেটিভ রক্ত শরীরে নেয় তাহলে তার রক্তের সেলগুলো ভেঙ্গে যাবে এবং মারাত্মক সমস্যা দেখা যাবে। যেমন জ্বর, কিডনি সমস্যা হঠাৎ মৃত্যু ইত্যাদি।
এখন আসা যাক আমরা কেন স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ বিয়ের আগে জেনে নিব…………
যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ Oনেগেটিভ’ হয় তাহলে স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ O পজেটিভ বা নেগেটিভ যেকোনো একটি হলে হবে। কিন্তু স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি বি পজেটিভ হয় তাহলে বি পজেটিভ রক্তের গ্রুপের একজন হতে হবে। কোনভাবেই স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হওয়া চলবে না। অর্থাৎ একজন নেগেটিভ রক্তের গ্রুপের নারী কেবলই একজন নেগেটিভ রক্তের পুরুষের সঙ্গে বিয়ে করায় নিরাপদ। কারণ যদি এর উল্টোটা হয় অর্থাৎ রক্তের গ্রুপ মিলে গেলে তো কোন সমস্যা নেই তবে ভিন্ন রক্তের গ্রুপে স্ত্রী যদি নেগেটিভ হয় আর স্বামী যদি পজিটিভ হয় তাহলে সন্তান জন্মের সময়ে লিথাল জিন বা মারুঞ্জি নামে একটি জিন তৈরি হয় যা পরবর্তীতে জাইগোট তৈরিতে বাধা দেয়। সেই ক্ষেত্রে মৃত বাচ্চার জন্ম হয় যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ হয়।
এখন আসা যাক সেই কাঙ্খিত বিষয়টিতে
স্বামী এবং স্ত্রীর ব্লাড গ্রুপ কি রকম হলে আমরা একটি সুস্থ সন্তান পেতে পারি অর্থাৎ স্বামী এবং স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নিয়ে আমরা চিন্তিত এই কারণে যে পরবর্তীতে তাদের দ্বারা জন্ম নেওয়া বাচ্চাকে সুস্থ হবে কিনা। তাহলে বন্ধুরা আমরা এখন জানবো স্বামী এবং স্ত্রীর ব্লাড গ্রুপ কি রকম হলে একটি সুস্থ সন্তান পৃথিবীতে আসবে। স্বামীর রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ হয় তাহলে স্বামীর গ্রুপ যদি পজিটিভ হয় তাহলে কোন ভাবে স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ’ হওয়া চলবে না। আর যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ বা পজিটিভ যেকোনো একটি হলেই হবে এক্ষেত্রে স্ত্রী যদি নেগেটিভ হয় তাহলে তার স্বামীর রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ হলে অনেক সমস্যা এড়ানো যাবে।
এখন খুব সহজে আপনাদেরকে এই বিষয়টি বুঝিয়ে দিব
- স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি O পজেটিভ হয় স্ত্রীর গ্রুপ ও যদি O পজিটিভ হয়, সন্তান সুস্থ হবে।
- স্বামীর ও স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ’ হলে সন্তান সুস্থ হবে।
- স্বামির রক্ত গ্রুপ যদি পজেটিভ হয়, কিন্ত স্ত্রীর গ্রুপ যদি নেগেটিভ হয় এবং প্রথম সন্তানের গ্রুপ যদি নেগেটিভ হয়, তাহলে পরবর্তী সন্তান জন্ম নিতে কোন সমস্যা হয়না। কিন্ত প্রথম সন্তানের গ্রুপ যদি পজেটিভ হয় পরবর্তী সন্তান জন্ম নিতে সমস্যা হয়।
এজন্য অনেক উপায় রয়েছে।
সেগুলো হলো আগে কখনো এমন না হয়ে থাকলে অনেক সমস্যা এড়ানো যাবে। শুধু সচেতন থাকতে হবে স্বামীর ব্লাড গ্রুপ O পজেটিভ হলে বাচ্চা জন্মের পরপরই বাচ্চার ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। যদি নেগেটিভ হয় মায়ের মতো তবে কিছুই করার দরকার হবে না আর যদি পজিটিভ হয় তার মানে নিশ্চিত থাকতে হবে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে এবং এন্টি বডির জন্য ডেলিভারি ৭২ ঘন্টার মধ্যে তিনটি ইনজেকশন নিয়ে নিতে হবে এতে করে দ্বিতীয় বাচ্চাটি সুস্থ ভাবে জন্ম দেওয়া যাবে।