দাঁত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোর মধ্যে একটি। এই দাঁত হাসির মাধ্যমে আমাদের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি করে তার সাথে সাথে খাবার হজমে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
কারণ আমরা যে খাবার গুলো খেয়ে থাকি তা বাস্তবে পাকস্থলিতে তে আমরা পাঠাতে পারি না আবার পাকস্থলিতে যাবার আগে কিছু ধাপ পেরিয়ে যেতে হয়,যেমন খাবারকে প্রেষিত ও চর্বিত করে, তারপরে পাকস্থলিতে পাঠানো উচিত। আর এই চর্বিত উপকরণের কাজটি করে থাকে আমাদের দাঁত। তাই দাঁতের যত্ন নেওয়া খুব বেশি জরুরি।
এখন আমরা জানবো কিভাবে আমরা এই দাঁতের যত্ন নিতে পারিঃ
এখন দাঁতের যত্নে আমাদের যে কাজগুলো করতে হবে…………
- সুস্থ দাঁতের জন্য নিয়মিত সকালে নাস্তার পরে ও রাতে খাবারের পরে দুবার সঠিকভাবে দুই মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। ব্রাশ করার সময় যথাসম্ভব আলত করে সার্কুলার মোশনে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
- ব্রাশটি ভালো মানের ও নরম হতে হবে।
- প্রতি তিন থেকে পাঁচ মাস পর পর ব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে।
- দাঁত নিয়মিত ব্রাশ করার পাশাপাশি সুতা দিয়ে প্রতিদিন দাঁতের ফাঁকের খাদ্যকণা গুলো বের করে ফেলতে হবে। তাহলে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা গুলো জমে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারবে না।
- আরও একটি বিশেষ করণীয় হচ্ছে, জীবাণুনাশক মাউথ ওয়াশ দিয়ে অথবা একগ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি লবণ দিয়ে মুখ কুলকুচি করতে হবে। তাতে দাঁতের ক্ষয়রোগ ও মাড়ির রোগ বেশিরভাগই প্রতিরোধ করা যায়।
- বাঁকা দাঁতে বেশি ময়লা জমে। তাই দীর্ঘ সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। খাবারের পরে অবশ্যই কুলি করা উচিত, কারণ দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা চর্বি ও শর্করা যুক্ত খাবার দ্রুত দাঁতের মসৃণতা নষ্ট করে। দাঁত ব্রাশ করার সময় ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। আস্তে আস্তে জিভ ও পরিষ্কার করা যায়।
- শরীরের মত মানুষের দাঁত মুখের ব্যায়াম আছে। সুয়িংগাম খেলে দাঁত ও মুখের মাসলের ব্যায়াম হয়।
- টুথপিক ব্যবহারে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। টুথপিক ব্যবহারে মাড়িতে ইনফেকশন হতে পারে। এছাড়া কয়লা, মাটি, গাছের ডাল, ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।
- পান, তামাক-জর্দা খাবার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। যা দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। অনেক সময় মুখে ঘা, ক্ষত বা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এগুলো থেকে। তাই এগুলো বাদ দিতে হবে।
- ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন। সিগারেটের নিকোটিনের প্রভাবে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে থাকে। এতে দাঁতের কালো দাগ তৈরি হয়।
- দাঁত বা মুখের ভেতরে যে কোন সমস্যা হলে অবহেলা করা উচিত নয়। মুখের ভেতর কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে যেমন ঘায়ের মত কিছু দেখা গেলে অতি দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
- প্রতি ছয় মাস অন্তর একবার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে মুখ ও দাঁতের পরীক্ষা করাবেন। বছরে দুবার পরীক্ষার হলে আপনার দাঁত থাকবে সুরক্ষিত ও মজবুত।
দাঁতের যত্নে কিছু খাবার রয়েছে দাঁতের সুস্থতার জন্য। যত্নের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় খাদ্যের। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ফ্লোরিন ইত্যাদি দাঁতের জন্য অপরিহার্য। আর তা খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব।
এখন আসা যাক কোন কোন খাবারের মাধ্যমে কোন কোন ভিটামিন আমরা পূরণ করতে পারব।
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার
ক্যালসিয়াম দাঁত ও মাড়ি কে মজবুত করে। এ ধরনের পুষ্টি গুলো যে সকল খাবার থেকে আমরা পাব সেগুলো হলো দুধ, দই, পনির, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, সয়াবিন, শিমের বিচি ইত্যাদি।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার, এগুলো মাড়ি থেকে রক্তপাত হওয়া কমাতে সাহায্য করে। এগুলো যে খাবার থেকে আমরা পাব তা হলো আমলকি, পেয়ারা, লেবু জাতীয় ফল, মালটা, টমেটো, কাঁচা মরিচ, ইত্যাদি।
আয়োডিনযুক্ত খাবার
আয়োডিনযুক্ত খাবার হচ্ছে বাঁধাকপি, ফুলকপি, সামুদ্রিক মাছ ও আয়োডিনযুক্ত লবণ।
ভিটামিন বি জাতীয় খাবার
ভিটামিন বি জাতীয় খাবার, এগুলো দাঁতের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। যেমন আঠা, ডিমের কুসুম, মাছ, চিনাবাদাম এ ধরনের খাবার থেকে আমরা ভিটামিন b1 পেয়ে থাকি।
বিশুদ্ধ পানি পান করা
তাছাড়া দাঁতের সুস্থতার জন্য যে খাবারটি সবচেয়ে বেশি দরকার সেটি হল বিশুদ্ধ পানি পান করা। বেশি পরিমাণে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং ব্যবহার করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন সেই পানি বিশুদ্ধ থাকে। পরিমিত পানি খেয়ে শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখবেন এবং বেশি বেশি পানি বিশুদ্ধ করে পান করবেন। সেটা দাঁত পরিষ্কার ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুব বেশি সহায়তা করে।
সর্বশেষে একটা কথাই বলব যে, প্রত্যেকটা জিনিসের সাথে সঠিক ও ভালো ব্যবহার করা উচিত। তাহলেই সব কিছু ঠিক থাকবে। আমাদের জন্য দাঁত একটা মূল্যবান সম্পদ। যখন আমরা এই দাঁতের পরিচর্যা আগে থেকে ঠিক মতো করে নিব, তাহলে আমাদের দাঁত সুস্থ সুন্দর ও সাদা থাকবে । উপরে যে ধাপগুলো আমরা আজকে গুরুত্বের সাথে আলোচনা করলাম এগুলো যদি আপনারা অনুসরণ করেন তাহলে আপনার দাঁত সুন্দর সুস্থ থাকবে ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ।