বন্ধুরা আজ আমরা জানবো, ফুসফুস কি??? এবং এটি কিভাবে আমাদের শরীরে কাজ করে???
ফুসফুস কি
ফুসফুস মেরুদন্ডী প্রাণীর একটি অঙ্গ যা শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে ব্যবহৃত হয়। এই শ্বাসযন্ত্রটির প্রধান কাজ হল বাতাস থেকে অক্সিজেন কে রক্তপ্রবাহে নেওয়া এবং রক্তপ্রবাহ হতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে নিষ্কাশন করা। বাতাস আদান-প্রদান করা হয় বিশেষায়িত ভাবে তৈরি পাতলা দেওয়াল বিশিষ্ট বায়ুথলির দ্বারা, যাকে অ্যালভিওলাই বলে। অ্যালভিওলাই এর শ্বাসকার্য ছাড়া অন্য কাজ ও আছে।
বন্ধুরা বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত শ্বাস-প্রশ্বাস জরুরি এবং শ্বাস প্রশাস ছাড়া আমরা এক মুহূর্তের জন্যেও বেঁচে থাকতে পারিনা। শ্বাস-প্রশ্বাসের মত এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আমাদের শরীরের কোন অঙ্গটি করে থাকে সেটি হলো ফুসফুস।
বন্ধুরা ফুসফুস আমাদের শরীরের কোথায় অবস্থান করে এখন আমরা সে বিষয়ে একটু জানবো।
ফুস্ফুসের অবস্থান
আমাদের বুকের বাঁ দিকে রয়েছে হৃদপিণ্ড এবং হৃদপিণ্ডের দেহ জুড়ে রয়েছে এই ফুসফুস। ফুস্ফুসের কাজ হৃদপিণ্ডের রক্ত চলাচলের কাজে সাহায্য করা।
ফুস্ফুসের কাজ
এখন আমরা জানবো এই ফুসফুস আমাদের কি কি কাজ করে থাকে।
- ফুসফুসের প্রধান কাজ হল জীবাণুমুক্ত রক্ত হৃৎপিণ্ডে পৌঁছানো আর হৃৎপিণ্ড অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সারা দেহে পাঠায়। মানুষের দেহে ফুস্ফুস একটা ও থাকে আবার দুইটাও থাকে। দুটো ফুসফুসকে একত্রে বলা হয় ব্রংকাস। শ্বাস নেওয়ার সময় তা বেলুনের মতো ফুলে যায় এবং শ্বাস ছাড়ার পর আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এর আকৃতি বেলুনের মতো হওয়ায় একে দেহের বেলুন বলা হয়। প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক মানুষ প্রতি মিনিটে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় ১২ থেকে ১৮ বার আর শিশুরা নেয় ৩০ থেকে ২০ বার। তবে এই শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়াটি পরিবেশ-পরিস্থিতি মানসিক অবস্থার কারণে পরিবর্তন হতে পারে।
বন্ধুরা আমাদের কি মনে হয় না যে, আমাদের সুস্থ শরীরে কখনো শ্বাস-প্রশ্বাসের গতির অভাব হয়ে থাকে কিনা??? কেননা আমরা গড়ে প্রতি মিনিটে প্রায় ৫৭ লিটার বাতাস গ্রহণ করি থাকি। যার ফলে কখনো আমাদের শরীর কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসের ঘাটতি হয় না।
- আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয় যে আমাদের দুটো ফুসফুস সমান ও সমান্তরাল। কিন্তু এমনটি নয় আমাদের ফুসফুসের ডান অংশটি সামান্য লম্বা বাম অংশের তুলনায়। হৃৎপিণ্ডকে স্থান দেওয়ার জন্য আমাদের ফুসফুসের আকৃতিটি এমন হয়েছে।
- ডান পাশের ফুসফুস তিনভাগে বিভক্ত, অথচ বাম পাশের ফুসফুস দুই ভাগে বিভক্ত।
- মানবদেহের ফুসফুস কে চালনা করে থাকে আমাদের মস্তিষ্ক। এইযে ফুসফুস কতটুকু বাতাস গ্রহণ করবে বা কতটুকু বর্জন করবে আমরা একটু খেয়াল করলেই বিষয়টা বুঝতে পারব। যেমন পানির নিচে ডুব দেওয়ার সময় আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দিই।
- মাত্র একটি ফুসফুস দিয়ে আমরা আমাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারি। মাঝেমধ্যে একটু অসুবিধা বা সমস্যা হয়। অধিক পরিমাণে ব্যায়াম করা হলে সে সমস্যা আর থাকে না। এছাড়া মনেই হবেনা যে আপনার শরীরে একটি ফুসফুস নাকি দুটো ফুসফুস রয়েছে।
- মানব দেহের অন্য অঙ্গের তুলনায় ফুসফুস একটু আলাদা, কারণ এটি পানিতে ভাসতে পারে। অন্য সকল অঙ্গ পানিতে ভাসতে পারে না। এর কারণ হলো ফুসফুস নিষ্ক্রয় হওয়ার পরও এক লিটার মত বাতাস ভিতর জমা থাকে, যা পানিতে ভাসতে সাহায্য করে।
- সবাই মনে করে যে ফুসফুস একটি মাঝারি ধরনের অঙ্গ কিন্তু এটা বেশ বড় অঙ্গ। যদি একটি ফুসফুসের অংশগুলি ছড়ানো হয় তাহলে তা পুরো টেনিস টেবিল মাঠকে ঢেকে ফেলতে পারবে।
- ফুসফুস নিঃশ্বাসের শুধু মাত্র ৫ শতাংশ অক্সিজেন ব্যবহার করে থাকে, বাকি গুলো বের করে দেয়। এ প্রক্রিয়া ক্রমাগত চলতেই থাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
- প্রতি ঘন্টায় আমরা প্রায় ১৭ মিলি লিটার পানির মাধ্যমে করে থাকি।
- আমাদের মুখের সাথে ফুসফুসের সরাসরি সংযোগ রয়েছে যার কারণে ফুসফুস খুব সহজে শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজটি করতে পারে মুখের এবং নাকের মধ্য দিয়ে।
- ফুসফুস আমাদের মেরুদন্ডের পিছনের দিকে সুষুম্না কান্ডের সাথে যুক্ত। এর ফলে আমাদের ফুসফুস বেশ সুরক্ষিত অবস্থানে রয়েছে।
- শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া ও ফুসফুসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে ফুসফুস তার ৭০% ময়লা আবর্জনা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ত্যাগ করে ফেলে।
- তাছাড়াও বাচ্চারা যখন মায়ের পেটে থাকে তখন তাদের ফুসফুস সম্পূর্ণরূপে তরলে নিমজ্জিত থাকে। তাই একটি বাচ্চা যখন জন্ম লাভ করে তখন তার স্বাভাবিক হতে প্রায় ১০ সেকেন্ড সময় লাগে।
- ফুসফুস কথা বলায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ভিতর থেকে বাতাস বের না হলে আমাদের স্বরযন্ত্র কাজ করতে পারে না।
- পুরো বিশ্বের ৮০% ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী ধূমপান। তাই আমাদের ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
উপরে ফুসফুস সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিলাম। এ থেকে আমার বন্ধুরা খুব সহজে নিজেদের ফুসফুস সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে। এবং ফুসফুসের কার্যাবলী সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে পারবে। ধন্যবাদ।