আমরা যদি চোখের সমস্যার উপসর্গ খুব সহজে চিনতে পারি তাহলে এর চিকিৎসা গ্রহণ করতে আমাদের কোন অসুবিধা হবেনা। তাই আমাদের সব বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখা উচিত, যাতে ছোট কোন রোগকে আমাদের অজ্ঞানতায় বড় কোন রোগে রূপান্তর করতে না পারি।
তাহলে বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক,
চোখে কোন ধরনের সমস্যা গুলো সাধারণত হয়ে থাকেঃ
১। চোখে ছানি পড়াঃ
চোখে ছানি পড়ার কারণঃ
লেন্স হলো চোখের মধ্যে একটি স্বচ্ছ অংশ যা বাইরে থেকে আলোকে কেন্দ্রীভূত করে। যাতে চোখ দেখতে পায়।মানুষ বৃদ্ধ হতে থাকলে এই লেন্স দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর ভিতর দিয়ে আলো প্রবেশ করা বন্ধ করে দিতে পারে এবং এর ফলে ক্রমশ দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে এবং পরিশেষে অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে।
বৃদ্ধ লোকদের মধ্যে সচরাচর এটি দেখা যায়, কিন্তু কোলের শিশু বা বাড়ন্ত শিশুদের মধ্যেও দেখা যেতে পারে। এই সমস্যা নিয়ে বিলম্ব করা উচিত না। স্বাস্থ্যকর্মীরা ছানি যুক্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে পারে কারণ তারা এর লক্ষণ গুলো দেখলে বুঝতে পারে এবং তাদেরকে যে সমস্ত কার্যক্রম গুলো অনুসরণ করতে বলা হয় তা যদি অনুসরণ করে তাহলে খুব সহজে এই রোগ থেকে নিজেকে বাঁচানো যায়।
কিন্তু যদি আমরা তা অনুসরণ না করি পরে অস্ত্রোপচার করতে হয়। অস্ত্রোপচার করার সুযোগ রয়েছে যেখানে সেখানে পুরুষদের তুলনায় নারীরা চিকিৎসার ক্ষেত্রে কম সুযোগ পায়। তাই নারীদেরকে তাদের ঘরে গিয়ে তাদের দৃষ্টিশক্তি বিষয়ে সচেতন করা উচিত। যদি তারা বুঝতে পারে তাদের চোখে ছানি আসছে তাহলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দিয়ে এই বিষয়ে জানানো উচিত।
চোখে ছানি পড়ার চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
ঔষধ খাওয়য়ার মাধ্যমে ছানি দূর হয় না। এটি অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে সরিয়ে ফেলতে হয় এবং একটি পরিষ্কার লেন্স সেখানে বসিয়ে দেওয়া হয়।
অস্ত্রোপাচারের পরে চোখ ভেসে উঠলে ব্যক্তিটিকে জীবানুনাশক ও প্রদাহনাশক যে চোখের ড্রপ দেওয়া হয় সেটা ৪ সপ্তাহের জন্য ব্যবহার করতে হবে চোখে হয়তো সামান্য ব্যথা হতে পারে প্রথম দিকে। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা সেরে যাবে।
২। চোখের সাদা অংশে রক্ত জমাট বাধাঃ
এটাও চোখের একটি সমস্যা।
- কোন ভাবে চোখে কোন আঘাত লাগলে বা সামান্য আঘাত লাগলে মাঝেমাঝেই চোখের সাদা অংশে রক্ত দেখা যায়।
- ভারী কিছু উঠানোর পর চোখে রক্ত দেখা যায় ।
- জোরে কাশি দিলে বা সামান্য আঘাত লাগলে মাঝে মাঝে চোখের সাদা অংশে রক্ত দেখা যায়।
- এটি চোখের কিছু সুক্ষ সুক্ষ রক্তনালী ফেটে যাবার কারণে ঘটে থাকে। একটি কালশিটে দাগ যেমন শরীরের কোনো ক্ষতি করে না, ঠিক তেমনি এটিও কোনো ক্ষতি করে না। এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজেই চলে যাবে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
- কিন্তু চোখের রঙ্গিন অংশটিতে যদি রক্ত থাকে তবে তার সংকটজনক ও বিপদের সংকেত।
- শুষ্ক চোখ এবং খসখসে চোখের পাতা এটিও চোখের জন্য ক্ষতিকর। শুষ্ক জলবায়ু ও বায়ুতে ধোঁয়া এবং কোন কোন ওষুধের কারণে চোখ শুষ্ক হয়ে যায় অর্থাৎ চোখে প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ কমে যায়। চোখের পাতা খসখসে হয় যদি ময়লা বা চোখ থেকে নিঃসৃত রস আদ্রতা অশ্রু বের হওয়া রোধ করে, একে শুষ্ক করে ও চুলকানি সৃষ্টি করে।
চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
আপনার চোখকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ রাখুন। আপনার চোখ গুলো যদি শুষ্ক থাকে তবে আপনি চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি করতে দিনে এক থেকে দু’বার ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য গরম ভাপ দেবার চেষ্টা করবেন।
চোখের ড্রপ সাহায্য করতে পারে এই ক্ষেত্রে। এতে করে দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে আপনি একটি ভালো পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
তাছাড়া আপনারা যদি চান চিকিৎসকের পরামর্শে জীবানুনাশক চোখের মলম বা ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যদি ঘটে থাকে তাকে দূর করে দিবে।
৩। চোখের পাতার ওপর গোটা ও ফুলে উঠাঃ
চোখের পাতার ওপর গোটা ও ফুলে উঠা চোখের একটি সমস্যা।চোখের পাতার ওপর একটি লাল হয়ে ফুলে ওঠা গোটা যখন চোখের চারপাশের সংক্রমণের কারণে সৃষ্টি হয়।
বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া অথবা কিছু একটা হবে যা হয়তো চোখের পাতার ভিতরে কিছু আটকে থাকার কারণে সৃষ্ট হওয়া একটি বেদনাহীন পদার্থ। কোন কোন সময় এটি চারপাশে শুরু হওয়া সংক্রমণ চোখের পাতার ভেতরের দিক পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
দিনে চারবার করে প্রতিবার চোখে গরম সেঁক দেওয়ার মধ্য দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। গরম দেওরার সময় চোখের উপর বাঁধ দেওয়া ওই গুটাটি যাতে কোনভাবে ফেটে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
আর গরমের সেঁকে যদি ফুলা কয়েকদিনের মধ্যে কমে না যায়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা বলে এ ধরনের গোটা যদি আপনার চামড়ার উপরে উঠে চোখের তাহলে এই প্রক্রিয়াটি মধ্য দিয়ে আপনি সেরে ফেলতে পারবেন।
৪। রাতকানা রোগঃ
ভিটামিন এ এর অভাবে এই রোগটি হয়ে থাকে। ভিটামিন এর অভাব এক ধরনের অপুষ্টি যা শিশুদের চোখের ক্ষতি করে। অন্ধত্বও ঘটাতে পারে।
এটি প্রতিরোধযোগ্য। ছোট শিশুদের চোখ রক্ষা করতে তারা যেন কমলালেবু, গাজর, পেঁপে, সবুজ শাকসবজি, মাছ, ডিম এর মত ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়া।
বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুর চোখে এই ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য শিশুদেরকে ভিটামিন এ এর সম্পূরক খাদ্য দিতে হবে।
যেখানেই এ ধরনের অপুষ্টি সচরাচর দেখা যায় সেখানে মাঝে মাঝে সকল শিশুদেরকে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর হলেও ভিটামিন এর সম্পূরক খাবার খাওয়ানো উচিত।
কিভাবে আমরা বুঝবো কোন শিশু রাতকানা রোগে আক্রান্ত অর্থাৎ রাতকানার উপসর্গগুলো কি কি…………
- প্রথমে চোখগুলো শুকনো হয়ে ওঠে এবং কম পরিমাণে অশ্রু সৃষ্টি করে।
- তারপর অল্প আলোয় দেখা আরো বেশী কঠিন হয়। চোখের সাদা অংশটি এর উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে এবং পরিশেষে চোখ গুলো আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরিশেষে শিশুরা অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এখন এর চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমরা যে পরামর্শ আপনাদের দিব সেটি হলো যদি একটি শিশু বিকেলবেলা ভালো করে দেখতে না পায় বা শিশুটির হাম হয় তবে শিশুটিকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো।
৫। ট্যারা চোখঃ
এটিও চোখের একটি সমস্যা।
এই রোগ হলে বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। এটি অনেক বেশি জরুরী কারন সময় বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা আরো বড় আকার ধারণ করতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
ডাক্তারেরা খুব সহজে এই ধরনের রোগ সারিয়ে তুলতে পারে। চোখের ডাক্তার হয়তো সাহায্যের জন্য বিশেষ চশমা ব্যবস্থা করে দিতে পারে।
সোজা করতে ট্যারা চোখ কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়না। বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করলে এই সমস্যা থেকে বাচ্চাদের নিস্তার করানো সম্ভব
উপরে যে সকল চোখের সমস্যা ও সমাধানের কথা বললাম এছাড়াও চোখে আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন জন্মান্ধ, ছোট ছোট দাগ পড়া, তাছাড়াও চোখের উপরের মাংস বৃদ্ধি পাওয়ার মত হতে পারে,
তাহলে বন্ধুরা আমাদের উচিত চোখের উপসর্গ গুলো ভালো মত পর্যবেক্ষন করে ডাক্তার কে এই সকল উপসর্গগুলো বলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা করা। যাতে করে আমরা খুব সহজেই সকল রোগ থেকে নিস্তার পায়।
ধন্যবাদ।