আজ জানবো রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার বলতে কি বুঝায়???
সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করব।
প্রথমে আসা যাক,
রক্তচাপ আসলে কিঃ
রক্তের স্রোত রক্তনালীর দেওয়ালে যে চাপ সৃষ্টি করে তাকেই রক্তচাপ বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় এর পরিমাণ ১২০/৮০ হয়ে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ বাড়তে পারে। তখন এই পরিমাপ থেকে আরেকটু বেশি চাপ কেউ স্বাভাবিক বলে ধরা হতে পারে।
রক্তচাপ কে কয় ভাগে ভাগ করা যায়। আমরা সবাই জানি রক্তচাপকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় একটি হলো উচ্চ রক্তচাপ অপরটি হল নিন্ম রক্তচাপ।
রক্তের চাপ দু’ভাবে বাড়তে পারে,
- হঠাৎ কোনো উত্তেজনার বশে বা
- অন্য কোন কারণে।
ধুম করে রক্তের চাপ খুব বেশি বেড়ে গিয়ে বিপত্তি ঘটতে পারে। এটি কে কুইজ বা হাই ব্লাড প্রেসার বলা হয়। এতে আচমকা স্ট্রোক হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারঃ
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারদু’ভাবে বাড়তে পারে। কোনো উত্তেজনার বশে বা অন্য কোনো কারণে দুম করে রক্তের চাপ খুব বেশি বেড়ে গিয়ে বিপত্তি ঘটতে পারে। এটি হাই ব্লাড প্রেসার। যার কারণে হার্ট ফেল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্ট্রোক করতে পারে।
এখন আসা যাক
ক্রনিক হাই ব্লাড প্রেসারঃ
ক্রনিক হাই ব্লাড প্রেসার এর ক্ষেত্রে চাপের পরিমাণ হঠাৎ করে খুব বেশি বাড়ে না, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রক্তের উচ্চচাপ পুষে রাখার জন্য হার্ট এর বেশি ক্ষতি হতে পারে। কারণ বেশি রক্ত পাম্প করতে হার্ট এর উপর বেশি চাপ পড়ে, তাছাড়া অনেকদিন ধরে রক্তচাপে ভোগে রক্তনালীগুলো শক্ত হয়ে যায়, সেগুলোর স্থিতিস্থাপকতা কমে যায় রক্তনালির ভেতরের দেয়াল মোটা হয়ে যায়, ফলে ব্লগ তৈরি হয়, সব মিলিয়ে হার্ট ফেইলিওর বা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
এছাড়াও রক্তনালীতে ব্লক তৈরি হওয়ার জন্য বেশি রক্তচাপের কারণে নালীর মধ্যে রক্ত দলা পাকিয়ে যেতে পারে, সেই দলা বা ব্লগ মাথায় পৌঁছে স্ট্রোক হতে পারে। আবার রক্তের চাপ সহ্য করতে না পেরে কোন ধমনী ছিড়ে গিয়ে স্ট্রোক হতে পারে। অতএব রক্তচাপ হতে পারে মারাত্মক।
এমনিতে উচ্চরক্তচাপের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তাই ভিতরে ভিতরে যে রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে এটা অনেকেই টের পান না। এ জন্য ৩৫ বছরের পর থেকে মাঝে মাঝে ব্লাড প্রেশার মেপে নেওয়া দরকার।
আর দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে ভালো হবে প্রসার মেশিন বাড়িতেও রাখতে পারেন।
এখন আমরা আপনাদেরকে বলবো কেন আমাদের প্রেসার বেড়ে যায়…………
- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়সের সঙ্গে রক্তচাপ সমানুপাতিক হারে বাড়ে। বলা হচ্ছে ১৮ বছরের উর্ধ্বে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন। আর পঞ্চাশের কোঠায় বয়স হলে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৫জন। বয়স তার বেশি হলে প্রতি দুজনের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপ হবার সম্ভাবনা খুব বেশি।
- খাবারে বেশি লবণ খেলেও আমাদের ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া কাঁচা নুন খাওয়া তো আরো বেশি খারাপ।
- ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। শারীরিক পরিশ্রম না করে বসে বসে থাকলে ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে।
- মানসিক চাপ বা উত্তেজনা বাড়লে আমাদের এক ধরনের গ্রন্থি থাকে যা থেকে হরমোন ক্ষরণ বেড়ে যায়, এ হরমোন ক্ষরণ বেড়ে গেলে রক্তের চাপ ও আমাদের বেড়ে যায়।
এখন আসা যাক খাবার-দাবারও রক্তচাপ এর মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কিনা………
এমন কোন খাবার যে সকল খাবার গ্রহণ করলে আমাদের রক্তের চাপ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঠিক বন্ধুরা,
এই ধরনের অনেক খাবার রয়েছে যা আমাদের ব্লাড প্রেসার কে বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ব্লাড প্রেসার বাড়লে প্রথমে যে কাজটি করতে হবে সেটি হল ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। ওজন বাড়লে রক্তচাপ বেড়ে যায় তাই ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে। এর সাথে সাথেই যে কাজটি করতে হবে সেটি ডায়েট চার্ট মেইনন্টেন করতে হবে। আমাদের উচিত উদ্ভিজ্জ খাবার বেশি করে খাওয়া। প্রাণিজ খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ প্রোটিন জাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিত
- ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে প্রথমে যেই খাবারটির কথা মাথায় আসে সেটি হল লবণ নুন। এর মধ্যে সোডিয়াম পদার্থটি আমাদের ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। দিনে দুই থেকে তিন গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
- প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। কারণ হলো জল শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে এতে করে আমাদের শরীরের রক্তের চাপ কমে যায়।
- মানসিক চাপের সাথে ব্লাড প্রেসার এর একটি ভালো যোগাযোগ রয়েছে। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বাড়লে রক্তচাপ বাড়ে আবার এর উল্টোটাও হয় রক্তের চাপ বাড়লে স্ট্রেস ও বাড়ে। নার্ভের উপর চাপ পড়ে ফলে প্রেসার বাড়ে। তাই স্ট্রেস বা মানসিক চাপকে প্রশ্রয় না দিয়ে তার স্ট্রেসের মোকাবেলা করা উচিত। আমরা যদি মানসিক চাপ কম নেই তাহলে আমাদের ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এখন আসা যাক কিভাবে আমরা প্রেসার বা রক্তচাপকে আয়ত্তে আনতে পারব। নিয়মিত প্রেসারের ওষুধ খেতে হবে। কোনোভাবেই প্রেসারের ওষুধ খেতে ভুলে যাবেন না। প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে এলে সেটি বজায় রাখতে ওষুধ খেয়ে যেতেই হবে। নইলে আবার প্রেসার বেড়ে যেতে পারে।
- সমস্যা হোক বা না হোক কয়েক মাস পর পর ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করতে হবে। দরকারে ডাক্তারকে বলে ওষুধ বদলে নিতে পারেন। খাবারের নুনের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিবেন।
- মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে সেটি কমিয়ে ফেলতে হবে শুয়ে বসে দিন কাটাতে শুয়ে বসে দিন কাটানোর অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
- পরিশ্রম করতে হবে এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- খাবার-দাবার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার।
এই ধরনের পরামর্শ গুলো যদি আমরা ঠিকমত গ্রহণ করি তাহলে উচ্চ রক্তচাপ থেকে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারব। এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাহলে বন্ধুরা, আজকে এই পরামর্শ গুলোর মধ্য দিয়ে আপনারা জানতে পারলেন রক্তের চাপ কি?
রক্তের চাপ কয় ধরনের এবং উচ্চ রক্তচাপ কেন বেড়ে যায় এবং কিভাবে আপনারা তা কমিয়ে ফেলবেন।