রসুন খাওয়ার উপকারিতা গুলো এবং কিছু স্বাস্থ্য গুনগুলো আলোচনা করবো।
রসুন খুবই উপকারী একটি মসলা। কারন হিসাবে ব্যাপক ঘ্রানের কারনে বিভিন্ন সবজি, মাংস দিয়ে বিভিন্ন রান্না যেমন কাচি্চ, করি ইত্যাদি রান্নার কাজে রসুনের গুণ বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের এই উপমহাদেশে রান্না বান্নার মসলা হিসাবে রসুনের ব্যবহার হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে। আর এই রসুন বহির্বিশ্বেও ব্যাপক জনপ্রিয় একটি মসলা। মসলা হিসাবে রসুনকে অনেকই বলে থাকে ‘পাওয়ার হাউজ অব মেডিসিন ফ্লেবার’ কারণ যারা প্রতিদিন কাচা বা সেদ্ধ রসুনের কোয়া খায় তাদের শরীর সুস্থ্য থাকে। আর যারা প্রতিদিন এই রসুন নিয়মিত খায় তারা বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা পায়।
উপমাহাদেশে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাঁচা রসুন খাওয়ার রেওয়াজ আছে। তাছাড়া রসুন বিভিন্ন সামাজিক এবং সংস্কৃতিতে এখনো রসুনের বেশ ব্যবহার করে। আমাদের দেশে আদিকালে মানুষ ঘর থেকে পোকা দমনের জন্য রসুন ব্যবহার করতো। এই রসুন ইউরুপে প্লেগ রোগ দমনে ব্যবহার করা হতো।কারণ রসুনে রয়েছে বিভিন্ন যৌগ যেমন অ্যালিসিন যা অনেক রোগের নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। আবার অনেকেই বলে থাকে নিয়মিত রসুন খেলে ব্যাকটেরিয়া,ফাঙ্গাস,ক্যান্সার থেকে মুক্তি মিলে।
আজকে রসুনের কিছু স্বাস্থ্য উপকাররিতা এবং কিছু গুন নিয়ে আলোচনা করবো।
রসুন রক্ত পরিষ্কার রাখে
প্রতিদিন সকালে রসুনের দুটি কোয়া ও এক গ্লাস পরিমাণ গরম পানি সেবন করতে হবে। আর দিনে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এতে রক্ত পরিষ্কার হবে এবং ত্বক ভালো থাকবে। আর ওজন কিছুটা কমাতে চাইলে সকালে রসুনের সঙ্গে পান করা গরম পানিতে কিছুটা লেবুর রস দিতে হবে।
রসুন ঠান্ডা ও জ্বরে
প্রায়ই ঠান্ডা ও জ্বরে পড়েন এমন ব্যক্তিদের জন্য রসুন হতে পারে এক মহৌষধ। শরীর থেকে জ্বর আর ঠান্ডা দূর করতে প্রতিদিন দু-তিন কোয়া রসুন কাঁচা খেতে হবে। এ ছাড়া রান্না করা বা চায়ের সঙ্গেও রসুন খাওয়া যায়। আর রসুনের গন্ধ খারাপ লাগলে এর সঙ্গে আদা ও মধু মিশিয়ে নেওয়া যায়। এভাবে নিয়মিত সেবনে ঠান্ডা ও জ্বর শুধু সাময়িক দূর হবে না বরং শরীরে এগুলোর প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়বে।
রসুন হৃদরোগ থেকে বাঁচতে
প্রতিদিন রসুনের কয়েকটি কোয়া কাঁচা বা আধা সিদ্ধ করে সেবনে কেলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে। আর রক্তচাপ ও রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক রাখতেও রসুন কাজ করে। রসুনের মধ্যে থাকা সালফার-ভিত্তিক যৌগ অ্যালিসিন মূলত স্বাস্থ্যে এই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, রসুন কাঁচা সেবন সবচেয়ে ভালো। সিদ্ধ করা হলে অ্যালিসিনের ঔষধি গুণ কমতে থাকে।
রসুন ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুঘটিত রোগ প্রতিরোধে
ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুঘটিত রোগ প্রতিরোধে হাজার বছর ধরেই রসুন ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের কৃমি দূর করতে রসুনের নির্যাস ভালো কাজ করে। রসুনের নির্যাস থেকে ‘মাউথ ওয়াশ’ (মুখের ভেতর পরিষ্কারের তরল) তৈরি করা যায়। এটি নিয়মিত ব্যবহারে মাড়িতে ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার বন্ধ হয়।
রসুন ক্যানসার প্রতিরোধে
প্রতিদিন নিয়মিত কাঁচা ও রান্না রসুন সেবনের মাধ্যমে পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়। বেশ কয়েকটি গবেষণায় এই দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিত রসুন সেবনে শরীরে সব ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়।
রসুন ত্বক ও চুলের যত্নে
নিয়মিত রসুন সেবনে ত্বক সুন্দর হয় ও বয়সের ছাপ দূর হয়। এ ছাড়া ফাঙ্গাশ ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে ত্বক সুরক্ষায় নিয়মিত রসুন সেবন করতে হবে। আর চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজাতে রসুন ভালো কাজ করে। এই উপকার পেতে মাথায় নিয়মিত রসুনের নির্যাস বা রসুন সমৃদ্ধ তেল ব্যবহার করতে হবে।
রসুন কাটা সারিয়ে তুলতে
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রসুনের অনেক ব্যবহার বিস্মৃত হয়ে গেছে, যার একটি হলো কাটা সারিয়ে তোলা। কাঠ বা বাঁশে ছোট টুকরো শরীরে কোথাও ঢুকে গেলে তা বের করে সেখানে রসুনের কোয়া কেটে লাগিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে শরীরের ওই অংশে ব্যান্ডেজ করে দিতে হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে উঠবে ওই কাটা।
রসুন ব্যবহারে সাবধানতা
হাঁপানি রোগী বা শ্বাসকষ্ট আছে এমন ব্যক্তিরা রসুন ব্যবহারে সাবধান থাকুন। অনেক ক্ষেত্রেই রসুন ব্যবহারে এমন রোগীদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অপারেশনের আগে রসুন সেবন বন্ধ রাখতে হবে। আর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দিনে দু-তিনটির বেশি রসুনের কোয়া খাওয়া যাবে না।