দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মধ্যে ওজন নিয়ন্ত্রণের কৌশল

বন্ধুরা, স্বাস্থ্য এবং সুস্বাস্থ্য, দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। স্বাস্থ্য বা শরীর আমাদের সবারই আছে । কিন্তু সেক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্যের কথা যদি বলি, সেটা শতকরা কজনের আছে??

সুস্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান নিয়ামক ওজন। যারা নিজেদের স্বাস্থ্যকে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং ফিট রাখতে চান তাদেরকে অবশ্যই নিজেদের ওজন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের কৌশল গুলো জেনে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণের কৌশল

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ

ওজন নিয়ন্ত্রণ করার আগে আমাদের জানতে হবে ওজন নিয়ন্ত্রণ বিষয়টা কি? ওজন নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে যেন আমাদের ওজন বেড়ে না যায় । আবার ওজন নিয়ন্ত্রণ বিষয়টা শুধুমাত্র ওজন বেড়ে না যাওয়াকেই নির্দেশ করে না বরং ওজন কমে না যাওয়াও নির্দেশ করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণের কৌশল

তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা এমন হওয়া উচিত যাতে আমাদের ওজন বয়স অনুযায়ী আমাদের ওজন ঠিক থাকে অর্থাৎ ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে ।

তাহলে বন্ধুরা চলুন , আমরা জেনে নেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু কার্যকরী উপায়।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু ওজন নিয়ন্ত্রণের কৌশল:

 রুটিনমাফিক খাদ্যাভ্যাসঃ

ওজন নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রধান এবং মুখ্য বিষয় হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। নিজেদের খাদ্যাভ্যাসের যদি পরিবর্তন আনতে না পারেন তাহলে যতই কাঠখড় পোড়ান, কোন ফলাফলই আশানুরূপ হবেনা। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রথমেই আমাদেরকে নজর দিতে হবে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের উপর।

 যেমনঃ

★★ নিজের বয়স, উচ্চতা এবং শরীরের ক্যালরি চাহিদা অনুযায়ী খাবার নির্বাচন করা

★★নিয়মিত সময় অনুসারে পরিমিত খাবার গ্রহণ।

★★খাবারের মেনু এমন হতে হবে,যেখানে শর্করা খুবই কম পরিমাণে হবে।

★★আমিষের পরিমাণ কম করে হলেও শতকরা 20 ভাগ।

★★ এবং উপকারী চর্বি থাকবে ৭০ ভাগ।

★★খাবার অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করা। যা আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

★★খাবার খাওয়ার সাথে সাথে পানি পান করবেন না। কম করে হলেও ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পানি পান করা

★★কোমল পানিয় ওজন নিয়ন্ত্রণ এর অন্তরায়। তাই কোমল পানিয় পান থেকে বিরিত থাকা ।

★★ফাস্টফুড এবং বাহিরের তেলে ভাজা খাবারগুলো আমাদের খাবার তালিকা থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেয়া।

★★ রাতে খাবার গ্রহণের পরপরই ঘুমাতে না যাওয়া।

★★ খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি ফলমূল ইত্যাদি রাখা।

জাতি হিসেবে আমরা ভূজন রসিক হলেও ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে অবশ্যই পরিবর্তন আনা দরকার ।

নিয়মিত শরীরচর্চাঃ

ওজন নিয়ন্ত্রণের কৌশল
ওজন নিয়ন্ত্রণের কৌশল

ওজন নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে শরীরচর্চা । শরীরচর্চা মানে এই নয় যে আপনাকে জিমে ভর্তি হয়ে দিনে দুই-তিন ঘণ্টা করে সময় দিয়ে ব্যায়াম করতে হবে। আপনি চাইলেই আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্যেও আপনার শরীর সুস্থ রাখার জন্য শরীরচর্চা করতে পারেন। তবে চলুন আলোচনা করা যাক কিভাবে আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই শরীরচর্চা করতে পারেন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ।

★★। শরীরের উপর খুব বেশি প্রভাব না পড়লে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।

★★। ভোরবেলা অথবা বিকেলবেলা সময় বের করে নিয়ে কম করে এক ঘন্টার মতো ব্যায়াম করুন।

★★। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট আপনার শরীরকে সূর্যের আলোতে রাখুন।

ওজন কমানোর উপায়

★★। প্রতিদিন কম করে হলেও ১ ঘন্টা মত হাঁটার চেষ্টা করা যেটা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই উপকারী।। হেঁটে যাওয়া যায় এমন দূরত্বে আপনি গাড়ি, রিকশা, সিএনজি এসব ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে চলে যান।

★★। নিজের কাজগুলো নিজে করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমন কাপড় ধোয়া,ঘর পরিষ্কার করা, রুম পরিষ্কার করা ইত্যাদি।

★★। খেলাধুলার অভ্যেস গড়ে তুলুন।

পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামঃ

সুস্বাস্থ্য এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনার শরীরকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম দেয়া প্রয়োজন। তাহলে চলুন দেখে নিই ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য শরীরকে কতটা পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম দিবেন? কি পরিমান অবসর সময় কাটাবেন? ও কি পরিমান ঘুমাবেন?

★★ দৈনিক কম হলেও আমাদের শরীরের ৬ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য যদি আপনি আপনার শরীরকে ঘুম থেকেই দূরে রাখেন তাহলে অনিদ্রা গঠিত বিভিন্ন রোগ আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।

★★ কোন ভারী কাজ করার পর কম করে হলেও আধঘন্টা বিশ্রাম গ্রহণ করোন।

★★ রাত জেগে থাকার অভ্যাস পরিহার করুন।

★★ রাতে খাবার পর কিছুক্ষণ হেঁটে তারপর শুতে যাবেন।

 ওজন নিয়ন্ত্রণে মানসিক প্রশান্তিঃ-

কথায় আছে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাহলে আমাদেরকে এটা অবশ্যই বলতে হয় স্বাস্থ্যের মূল হচ্ছে মানসিক প্রশান্তি। মানসিক প্রশান্তি ব্যতীত একজন মানুষ কখনই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারেন না।। আর তাই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে মানসিক প্রশান্তি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।। তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাকআপনি কিভাবে  কিভাবে মানসিক প্রশান্তি অর্জন করবেন।

★★। যতটুকু সম্ভব দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা।

★★। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় স্বস্তিদায়ক শ্বাসের ব্যায়াম করা ।

★★। নিজের পরিবার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন কে যতটুকু সম্ভব সময় দেয়া।

★★। কোন বিষয় নিজের মধ্যে চেপে না রেখে সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব,আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা।

★★। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো।

★★। সুযোগ পেলেই বন্ধু-বান্ধব পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথাও ঘুরে আসা।

স্যার উইনস্টন  চার্চিল বলেনঃ-

একটি দেশের অর্জিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে দেশের সুস্থ নাগরিকগণ।

উপরে আলোচিত বিষয় সমূহ একজন ব্যক্তি যদি তার ব্যক্তি জীবনে পালন করেন,। তাহলে তিনি অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবেন।। এবং সুস্বাস্থের অধিকারী হবেন।। মনে রাখবেন সুস্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত ওজন।